জুমবাংলা ডেস্ক : গত ২ নভেম্বর মিডটার্মে ফেল ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকায় চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়ায় অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত ও ধাক্কা দিয়ে পুকুরের ফেলে দেয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় সম্প্রতি এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা ও সাত শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোন ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অপরাধী চিহ্নিত হওয়া এসব ছাত্র সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এরই মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সভায় যাদের ছাত্রত্ব বাতিল বা রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন- অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার মূল হোতা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রনিক্স মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।
সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও পরোক্ষভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে অন্যত্র বদলি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিডটার্মে ফেল ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এনিয়ে গত ২ নভেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ওইদিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এনিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ওই সময় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই সভায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, “মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করছিল। পরে সেটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, “ঘটনার মূল হোতা সৌরভসহ এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এজাহারের বাইরে থাকা আরো ১৩জন গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে, অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।