জুমবাংলা ডেস্ক : পণ্য কিনে বিক্রেতার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রমাণ করে ১ কোটি ৯ লাখ ৬ হাজার টাকা পেয়েছেন অভিযোগকারীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে করা অভিযোগগুলো তদন্ত শেষে ৬ হাজার ২৪২ জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের এই টাকা দিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির বিধান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদায় করা জরিমানার ২৫ ভাগ পাবেন ওই অভিযোগকারী।
হিসাব বলছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সংস্থাটিতে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ৩৩ হাজার ৭৭৭টি। এর মধ্যে, ৮০ ভাগের (৮১.৫২) বেশি অভিযোগেরই সত্যতা পাওয়া যায়নি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত সংস্থাটিতে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ১৭৯টি। সবগুলো অভিযোগই নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এর বিপরীতে ৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ হিসাবে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৫০ টাকা পান ওই ৫৪ জন অভিযোগকারী। এর পরের বছর থেকেই বাড়তে থাকে অভিযোগের সংখ্যা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে অভিযোগ জমা পড়ে ২৬৪টি। সবগুলো অভিযোগই নিষ্পত্তি করা হয় এবং দণ্ডিত হয় ১০৭টি প্রতিষ্ঠান। জরিমানা আদায় করা হয় ৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ওই বছর ১০৭ জন অভিযোগকারীকে দেয়া হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫শ’ টাকা। এর পরের অর্থবছরে অভিযোগ জমা পড়ে এর আড়াইগুন বেশি (৬৬২টি)। ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানা আদায় করা হয় ১২ লাখ ১৫ হাজার ৫শ’ টাকা। অভিযোগকারীরা পান ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৫টাকা।
২০১৬ সালে জুলাই থেকে ২০১৭ জুন পর্যন্ত আগের ১২ মাসের তুলনায় ৯ গুনের বেশি (৯.২৭) অভিযোগ জমা পড়ে। ওই অর্থবছরে জমা পড়ে ৬ হাজার ১৪০টি অভিযোগ। জরিমানা গুনে ১ হাজার ৪২৩টি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগকারী ১ হাজার ৪২০ জন পান ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৭৭ টাকা। আর এর তিনগুন টাকা (৪৬ লাখ ৮১ হাজার ৩১ টাকা) জমা পড়ে সরকারের কোষাগারে। পরের অর্থবছরে অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯টিতে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত ১ হাজার ৯৩৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হয় ১ কোটি ৬১ হাজার ৯৬ হাজার ৫শ’ টাকা। ২৫ শতাংশ হারে ১ হাজার ৯১০ জন পান ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ৫শ’ টাকা। এর পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভিযোগ ও দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে আসে। ওই অর্থবছরে জমা পড়ে ৭ হাজার ৫১৫টি অভিযোগ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১ হাজার ৪৬৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ আদায় করা হয় ৯৮ লাখ ৪ হাজার ৮শ’ টাকা। ১ হাজার ৪৩৬ জন অভিযোগকারী পান ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৫ টাকা। এর পরের অর্থবছরে আবার অভিযোগ সংস্যা বাড়ে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরেই সর্বোচ্চ সংখ্যক (৯১৯৫টি) অভিযোগ জমা পড়ে সংস্থাটিতে। অভিযোগ প্রমাণিত হয় ১ হাজার ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানা দেয় ৮৬ লাখ ১৩ হাজার ৪শ’ টাকা। ১ হাজার ৫৫ জন অভিযোগকারী পান ২১ লাখ ২৬ হাজার ৭২৫ টাকা। ওই অর্থবছরে অনিষ্পত্তি থাকে ১ হাজার ৫৩৫টি অভিযোগ।
আর চলতি অর্থবছরের এক মাসেই (জুলাই) অভিযোগ জমা পড়েছে ৮০৩টি। নিষ্পত্তি হওয়া ১৩৬টি অভিযোগের মধ্যে জরিমানা দিয়েছে ৬৮টি প্রতিষ্ঠান। আদায় ৬ লাখ ১৪ হাজার ৩শ’ টাকা থেকে অভিযোগকারী ৬৮ জনকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৫ টাকা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মোট হিসাবে দেখা যায, গেল জুলাই পর্যন্ত ভোক্তার করা অভিযোগ থেকে মোট ৪ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ২০৮ টাকা জরিমানা আদায় করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮১ টাকা। আর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে পারায় ৬ হাজার ২৪২ জন অভিযোগকারীকে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ৬ হাজার ৪২৭ টাকা।
অভিযোগ ও জরিমানা আদায় প্রসঙ্গে সংস্থাটির উপ পরিচালক মাসুম আরেফিন জানান, সরাসরি কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে (অনলাইন, ফোন) কেনার পর ঠিক মতো পণ্য বুঝে পাওয়ার ব্যাপারে দিনদিনই সচেতনতা বাড়ছে। সঠিক পণ্য না পেলে এর প্রতিকার চেয়ে তারা অভিযোগও করছেন। বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে সঠিক পণ্য না পাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। দোকান থেকে সরাসরি পণ্য কেনার সময় ক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিলেন এই কর্মকর্তা। কারণ, ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ভোক্তাদেরই সচেতনতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।