ভারতে ধর্মীয় স্লোগানকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক সরকারি দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত রাজ্যগুলোতে ‘আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি’ (I love Muhammad) লেখা সাইনবোর্ড প্রদর্শন এবং এর প্রতিবাদ করায় শত শত মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ঘটনার শুরু উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মুসলিম অধ্যুষিত সৈয়দ নগরে এই ধর্মীয় স্লোগান লেখা একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।
শ্রী রামনবমী সমিতি নামে একটি হিন্দু সংগঠন এর বিরোধিতা করে অভিযোগ করে যে ওই স্থানে তারা রামনবমীর সজ্জা করেন এবং এটি একটি ‘নতুন প্রথা’ চালুর চেষ্টা।এই উত্তেজনার পর পুলিশ ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের’ অভিযোগে ৯ জন মুসলিমসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে এবং সাইনবোর্ডটি সরিয়ে নেয়।
কানপুরের এফআইআরের প্রতিবাদে রাজ্যের বেরেলি শহরে উত্তেজনা ছড়ায়। মুসলিম নেতা মাওলানা তৌকির রাজা খান বিক্ষোভের ডাক দেন।
প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও ২৬ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার মানুষ ‘আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি’ লেখা পোস্টার নিয়ে সমবেত হন।
‘আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি’ বলায় ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগকর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর পাথর ছোড়ে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং তৌকির খানসহ ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।এরপর, অভিযুক্তদের একজনের সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, যা ‘বুলডোজার বিচার’ নামে পরিচিত।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনাকে ‘সুসংগঠিত বিশৃঙ্খলা’ আখ্যা দেন এবং হুঁশিয়ারি দেন যে ‘ডেন্টিং-পেন্টিং’ প্রয়োজন ছিল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সরকারি পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে।অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইট্স (এপিসিআর) জানিয়েছে, এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে অন্তত ২২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যেখানে ২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশকে ‘উস্কানিমূলক’ অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে এবং বেআইনি ‘বুলডোজার বিচার’ পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
আইনজীবীরা জানান, অভিযুক্তদের বেশিরভাগই প্রান্তিক এবং দিনমজুর শ্রেণির মানুষ, যাদের পক্ষে আইনি লড়াই চালানো প্রায় অসম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।