জুমবাংলা ডেস্ক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের শুনানি আজ। জামিন হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা।
শুনানি শেষে কী রায় হয়, তা জানার জন্য আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সচেতন মানুষেরও দৃষ্টি থাকবে আদালতের দিকে। বিএনপির নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের প্রত্যাশা- শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আদালত এবার তার জামিন মঞ্জুর করবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসাবিষয়ক প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টে পৌঁছেছে। বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। তবে প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে আজকের শুনানি কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নেতাকর্মীসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে শুনানির সময় এজলাস বা আদালত প্রাঙ্গণে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। সতর্ক থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। আইনজীবী ছাড়া কাউকে আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ সংক্রান্ত আবেদন জমা দেয়া হয়। পরদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন।
এরপর রোববার শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। ওই দিন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাবিষয়ক তিন অবস্থার তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুসারে খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স থেরাপির জন্য সম্মতি দিয়েছেন কিনা, দিলে সেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা, চিকিৎসা শুরু হলে এখন কী অবস্থা- তা জানিয়ে বুধবারের মধ্যে আদালতে এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদনের শুনানিতে এ আদেশ দেন। কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরবর্তী আদেশের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) তা কার্যতালিকায় আসবে বলে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানি না ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার সম্মতি দিয়েছেন কিনা। যদি নাও দিয়ে থাকেন, আমরা আশা করব উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জামিন দেবেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার বলে আসছে পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু আমরা দেখে আসছি সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পিজি হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছেন। অতএব পিজি হাসপাতালে যে চিকিৎসা সম্ভব নয়, এটা বোঝাই যাচ্ছে।’
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, সরকার বলছে জামিন আদালতের এখতিয়ার। কিন্ত যখনই খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়, তখনই অ্যাটর্নি জেনারেল এর বিরোধিতা করেন। অথচ সরকার বলছে, আদালত যদি জামিন দেয় তবে আমাদের আপত্তি নেই। তিনি বলেন, সরকার একদিকে বলছে আপত্তি নেই আর অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এসে আপত্তি জানান। এটা কি সরকারের দ্বিমুখী আচরণ নয়?
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, সেটা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আইনজীবীদের প্রমাণ করতে হবে। এ বিষয়ে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
দুর্নীতির দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দল ও পরিবারের সদস্যরা তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও তাতে অনুমতি মেলেনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনের জন্য এর আগেও হাইকোর্টে আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এ তিন বিবেচনায় হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এরপর আপিল বিভাগে গিয়েও ফল পাননি। গত ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দ্রুত ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার পদক্ষেপ নিতে বলা হয় আপিল বিভাগের ওই রায়ে।
সেই রায় গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে নতুন করে জামিন আবেদনের উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেলেও তিনি মুক্তি পাবেন না। মুক্তির জন্য তাকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেতে হবে। মোট ৩৬ মামলার মধ্যে ৩৪টি মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।