জুমবাংলা ডেস্ক: সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলায় দুই আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে রিমান্ড শুনানিকালে আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে উকালতনামা দাখিল করেননি। শুনানিকালে আদালতের বিচারক প্রধান আসামি সাইফুর ও অর্জুনের পক্ষে কোনও আইনজীবী না পেয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চান। এসময় তারা আদালতকে বলে, ‘ছাত্রাবাসের ঘটনার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। আমরা কোনও অপরাধ করিনি। এই ঘটনা ঘটিয়েছে রাজন, তারেক ও আইনউদ্দিন।’ বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক তুহিনুল হক তুহিন-এর একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালতের বিচারক পাঁদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে আদালত এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশি পাহারার প্রিজন ভ্যানে করে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে সাইফুর ও অর্জুনকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে আদালত এই আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি অ্যাডভোকেট খোকন কুমার দত্ত জানান, আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী উকালতনামা দাখিল করেননি। তবে বাদীপক্ষের হয়ে বেশ কয়েকজন আইনজীবী শুনানিকালে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আসামি সাইফুর ও অর্জুনের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় আদালত তাদের বক্তব্য শুনতে চান। এসময় তারা আদালতকে জানায়, ছাত্রাবাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তারা অপরাধ করেনি। ঘটনা ঘটিয়েছে রাজন, আইনউদ্দিন ও তারেক। তাদের বক্তব্য শোনার পর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আসামিদের পক্ষে কেউ কোনও উকালতনামা আদালতে দাখিল না করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরাও হতভম্ব। এ ঘটনায় আমরা জেনারেল মিটিং করে রবিবার ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে আসামিদের শাস্তির দাবি জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমসি কলেজ বন্ধ থাকার পরেও অদৃশ্য ইশারায় কেন ছাত্রাবাস খুলে রাখা হয়েছিল। যার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের পদত্যাগের দাবি জানাই।’
বাদীপক্ষের হয়ে শুনানিতে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট ইফতেখার আলম শোয়েব বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন দুই জন আসামির বিরুদ্ধে। এ সময় আদালতের এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী কয়েকজন পুলিশের রিমান্ড আবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করে আদালতে যুক্তি দেখান। পরে আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।‘
বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী। তিনি জানান, ধর্ষণ মামলায় সাইফুর ও অর্জুন লস্করের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মামলায় চাঁদাবাজি ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করারও অভিযোগ আনা হয়েছে।
ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে ছাতকের সীমান্তবর্তী খেয়াঘাট থেকে সাইফুর এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর সীমান্তের কাছের একটি গ্রাম থেকে অর্জুনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার অপর আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ও রবিউল ইসলামকে রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে হবিগঞ্জের শহরের কোরেশনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। রনিকে গ্রেফতার করে র্যাব। আর নবীগঞ্জ থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি হবিগঞ্জ সদর থানার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে আর রবিউল ইসলাম (২৫) সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানাধীন বড়নগদীপুর (জাগদল) গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া ওইদিন রাতে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে রাজ চৌধুরী রাজন, তাকে সহযোগিতা করায় আইনুল নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত পলাতক রয়েছে আলোচিত এই মামলার তারেক আহমদ ও মাহফুজুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে ঘুরতে আসা এক দম্পতিকে আটক করে জোর করে ছাত্রাবাসে তুলে আনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর স্বামীকে বেঁধে মারধর করে ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে সাইফুরসহ অন্যরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী ওইদিন (শুক্রবার) রাতে বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো- এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।