জুমবাংলা ডেস্ক: শারীরিক প্রতিবন্ধী মাকসুদা খাতুন (৪৮)। প্রায় ৩৪ বছর ধরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের আনকুটিয়া গ্রামে একা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন। মাকসুদা খাতুন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। নেই চিকিৎসার খরচ।
বৃহস্পতিবার সকালে তার খবর নিতে গেলে দুই হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে মাকসুদা খাতুন বলেন, ‘আমাকে বাঁচান। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। নইলে বিষ এনে দেন। খেয়ে মরে যাই। আমি আর যন্ত্রণা সইতে পারছি না।’
কথা বলে জানা গেছে, কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় মাকসুদা খাতুনের। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন স্বামী তারা মিয়া আগে একটি বিয়ে করেছেন। কয়েকমাস মুখ বুজে সতীনের সংসার করলেও সাংসারিক নানা জটিলতার কারণে ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। মা-বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। ভাইদের পরিবারও দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাইদের জায়গায় তোলা ছোট্ট ভাঙাচোরা টিনের দোচালা ঘরে অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছেন মাকসুদা খাতুন। শুয়ে থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন তিনি।
কেউ তার কাছে যাচ্ছেন না। তবে সাংবাদিক যাওয়ার কথা শুনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। বুক বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে রক্তপুঁজ। ঘরে উৎকট গন্ধ। রক্তপুঁজের গন্ধে কেউ তার পাশে যান না।
জানা গেছে, বছর খানেক আগে মাকসুদা খাতুনের ডান স্তনে টিউমার হয়। কিন্তু চিকিৎসা করানোর খরচ নেই বলে বিষয়টি চেপে যান তিনি।
পরে টিউমার ফেটে রক্তপুঁজ ঝরা দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানী চিকিৎসক মিজানুর রহমানের কাছে নিয়ে যান স্থানীয় স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক ও তার স্বজনরা। তিনি (চিকিৎসক) কোনো প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবস্থাপত্রে বিভিন্ন ইউনানী ওষুধ লিখে দেন এবং নির্দিষ্ট একটি দোকান থেকে কিনতে বলেন।
প্রায় তিন মাস চলে চিকিৎসা। কিন্তু রোগ না সারায় ওই চিকিৎসক মাকসুদা খাতুনকে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেননি তার স্বজনরা। শক্ত কাঠের চৌকিতে শুয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছেন অসহায় এই নারী।
প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা এবং মোজাম্মেল হক নামে স্থানীয় এক প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় মাকসুদা খাতুন কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই মাকসুদা খাতুনের দুই পায়ে সমস্যা। ভালো করে হাঁটতে পারে না। তার দুই ভাই দিনমজুর। স্বামী-সন্তানও নেই। তার (মাকসুদা) কষ্ট সহ্য করার মতো না। কিন্তু কী করবো ক্যান্সারের মতো এমন দুরারোগ্য ব্যাধির কাছে আমরা অসহায়। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধী এই অসহায় নারী হয়তো বাঁচতে পারতো!
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরমিলা আক্তার ঝুমি বলেন, মাকসুদা খাতুন নামের ওই নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। ক্যান্সারের জীবাণু শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে।
দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার মহাখালী ক্যান্সার ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করা প্রয়োজন। আর এ চিকিৎসার জন্য অনেক টাকাও প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
সূত্র: যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।