জুমবাংলা ডেস্ক : যেখানে সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি চা বাগানের নিরক্ষর শ্রমিকদের ইংরেজিতে অভিযোগপত্র ও চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এই কারণে শ্রমিকরা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ডানকান ব্রাদার্সের পরিচালনাধীন আলীনগর চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক অর্চনা গোয়ালা এবং শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক সবিতা রিকিয়াশন। তাঁরা প্রতিদিন ২২-২৩ কেজি কাঁচা চা-পাতা উত্তোলনের বিনিময়ে এক শ টাকার মতো মজুরি পেয়ে থাকেন। এই দিয়েই তাঁদের সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানের লেখাপাড়া, চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। বাগান কম্পানির দায়িত্ব বা নিয়ম পালনে ব্যত্যয় ঘটলে অথবা কোনো কারণে কর্তৃপক্ষ অসন্তুষ্ট হলে সেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অভিযোগপত্রের জবাব দিতে হয় শ্রমিককে।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের অভিযোগপত্র দেওয়া হতো ইংরেজিতে। বর্তমানে কিছু বাগান বাংলা ব্যবহার করলেও কমলগঞ্জের ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন চা বাগানগুলোতে আদালতের নির্দেশনার পরও ইংরেজির ব্যবহারই অব্যাহত রয়েছে। নিরক্ষর চা শ্রমিকরা যেখানে বাংলাই পড়তে পারেন না, সেখানে তাঁদের ইংরেজিতে জবাবদিহি করে তাঁদের এক ধরনের বিপদেই পড়তে হচ্ছে।
সবিতা, অর্চনা, দেওরাজ, সরস্বতীসহ কয়েকজন চা শ্রমিক অভিযোগ করেন, ‘এমনিতেই আমরা পড়ালেখা তেমন একটা জানি না। বিভিন্ন অভিযোগের জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে হয়। তখন আমাদের বিভিন্ন লোকের কাছে ধরনা দিতে হয়। এই কারণে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
শ্রমিকরা আরো বলেন, তাঁদের কেউ কেউ কোনোমতে নাম লিখতে শিখেছেন। অন্যরা টিপসই দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তাঁদের সন্তানরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করছে। তবে চা বাগান খুঁজে দু-একজন ইংরেজি জানা লোক পাওয়াও দুরূহ ব্যাপার। অথচ ব্রিটিশ আমল থেকে এভাবেই চলে আসছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, ইংরেজি অভিযোগপত্র দেওয়ার ফলে চা শ্রমিকদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। চা বাগানে উচ্চ আদালতের এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হওয়া উচিত।
আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইংরেজিতে অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শমশেরনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শ্রীমঙ্গলের কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘কিছু চা বাগানে ইংরেজিতে অভিযোগপত্র ও চিঠি দেওয়া হয়। তবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে আমরা তাদের বলে থাকি। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে সব কিছুতে বাংলা ব্যবহার করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।