জুমবাংলা ডেস্ক : তিন বছর বন্ধ থাকার পর নতুন করে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারগুলোর একটি, মালয়েশিয়াতে নতুন করে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে রোববার দেশটির সাথে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যয় বাড়ানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গ্রহণ বাতিল করে দেয় মালয়েশিয়ার সরকার।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারভানান নিজ নিজ দেশের পক্ষে কুয়ালালামপুরে এই স্মারক চুক্তি সাক্ষর করেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এই মুহূর্তে কুয়ালালামপুরে অবস্থান করছেন।
তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক মালয়েশিয়াতে শ্রমিক হিসেবে আবেদন করতে পারবেন।
কারা যেতে পারবেন
এক্ষেত্রে, কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভাষা শিক্ষা, ন্যূনতম ইংরেজির জ্ঞান মানে দেখে পড়তে পারার যোগ্যতা থাকতে হবে। একই সাথে মালয় ভাষার জ্ঞান বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
মূলত কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এসব খাতে নিয়োগ করা হবে শ্রমিক।
তবে মালয়েশিয়ার সরকার দক্ষ এবং সেমি-দক্ষ শ্রমিক নেয়ার কথা বলেছে, যে কারণে নিয়োগ কর্তা ঘোষিত যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন।
যেমন রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া, তাদের আবাসন, কর্মে নিয়োজিত করা এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ বহন করবেন।
নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন।
মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশী কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিন-সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে।
নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ নিশ্চিত করবেন।
মন্ত্রণালয় আশা করছে, এর ফলে এখন বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়াতে অভিবাসনের খরচ অনেক কমে যাবে।
কবে থেকে বাংলাদেশের কর্মীরা মালয়েশিয়াতে যেতে পারবেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে এর আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই সে প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে এমন কথা জানানো হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর আগে রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন এবং নিবন্ধন করানোর মতো কয়েকটি বিষয় চূড়ান্ত করতে হবে।
তিন বছর আগে যখন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে সেটি মূলত রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যয় বাড়ানোর অভিযোগে সে পদক্ষেপ নিয়েছিল মালয়েশিয়া।
এবার রিক্রুটিং এজেন্সি ইস্যুতে সতর্কতার সাথে এগোনো হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় বলছে।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ইতিবৃত্ত
মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছিল ১৯৯২ সালে। কিন্তু কয়েক বছর চলার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০০৬ সালে আবার কর্মী প্রেরণ শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশী ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এরপর আবার দু’দেশের মধ্যে আলোচনার পর ২০১২ সালে নতুন চুক্তি হয় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে। কিন্তু কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেটের দৌরাত্মসহ নানা অভিযোগে ২০১৮ সালে সেটি বন্ধ করে মাহাথির মোহাম্মদের সরকার। সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।