তৌফিক ওরিন : প্রধান সড়কে শুনশান নীরবতা, অলিগলিতেও চলাচল নেই বললেও চলে। নির্দিষ্ট পণ্যের দোকান ছাড়া সবকিছুই বন্ধ। এ যেন এক অন্য ঢাকা। দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) প্রাদুর্ভাবের পর লকডাউন চলাকালীন সময় বিশ্বের অন্যতম প্রধান জনবহুল নগরী ঢাকার চিত্র এটি। উত্তরার আজমপুর থেকে পুরান ঢাকার আজিমপুর, গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী কিংবা মিরপুর থেকে মতিঝিল; কোথাও চোখে পড়ে না কোন যানজট। রাস্তার পাশে সারি সারি দোকান গুলো বন্ধ। বাস স্টপেজ গুলোতে নেই শ্রমিকদের চিৎকার। এ যেন অপরিচিত এক নগরী।
রাজধানী ঢাকায় এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে নতুন করে ৩১২ জনের দেহে নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ এর সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ভেতরে ঢাকার রয়েছে ৪৪ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কের মধ্যদিয়ে দিন পার করছেন নগরবাসী।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে না গণ-পরিবহন। ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা সিএনজি চলছে মাঝে মাঝে। তবে অহরহ রিকশা চলাচল করছে। জরুরি প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার প্রধান বাহন এখন রিকশা।
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, দু একজন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া রাস্তাঘাটে কেউ নাই। মাঝে মাঝে প্রধান সড়ক বরাবর ছুটে যাচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। পাশের নীলক্ষেত মোড়ে একই অবস্থা। দুই-একজন ছিন্নমূল মানুষ ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। তবে স্বাভাবিক সময়ে এলাকায় জ্যামে বসে থাকা লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নিউমার্কেট এলাকায় কর্মরত নিরাপত্তারক্ষী হেলাল মিয়া জানান, সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত দু এক জন লোক চলাচল করতে দেখা যায়। তবে মাগরিবের আজানের পর পুলিশ আর্মি বা র্যাব ছাড়া রাস্তাঘাটে তেমন কাউকে চোখে পড়ে না। মাঝে মাঝে দু একটা এম্বুলেন্স অথবা প্রাইভেটকার রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়।
তবে একটু ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেখান থেকে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করায় অল্প কিছু মানুষ সেখানে রয়েছেন। তবে খাবার বিতরণ শেষ হলে যে যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।
টিএসসি এলাকার পথশিশু হাবিব এসেছেন খাবার সংগ্রহ করতে। সে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ফুটপাতে। হাবিব জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র প্রতিদিন রান্না করা খাবার দেয়। এজন্য খাবার নিতে আসি। খাবার দেয়া হলেই চলে যাই।
নগরীর বেশিরভাগ অফিস-আদালত বন্ধ। জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র খোলা রয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর চিরচেনা ঢাকা যেন পরিচিত হয় অপরিচিত এক নগরীতে।
অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্যকর্মী হোসনে আরা বেগম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মেডিকেল সার্ভিস কখনো বন্ধ হয় না। মানুষের সেবা দেয়ার জন্য আমরা নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে কাজ করে যাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।