জুমবাংলা ডেস্ক : নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের বুড়িকদমা গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে একঘরে করে রাখা হয়েছে ৪টি পরিবারকে। তাদের সঙ্গে গ্রামের লোকজনের কথা বলা নিষেধ। কথা বললেই গুনতে হবে ৫শ টাকা জরিমানা। এমনকি মসজিদে প্রবেশে নিষেধ থাকায় তারা গ্রামে নামাজ পড়তে পারেন না। জুমআর নামাজ পড়তে যান অন্য গ্রামের মসজিদে।
ইতোমধ্যে গ্রাম্য মাতব্বরদের অত্যাচারে ঘর ছেড়েছে একটি পরিবার। স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী খোলাবাড়িয়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
জানা যায়, প্রায় ৮ মাস আগে ওই গ্রামে পীরস্থানের জমি দখল করে বাড়ি করেন জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এ সময় মান্নান পক্ষ মাদরাসা নির্মাণের প্রস্তাব দিলে শুরু হয় বিরোধ। জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাকে বসবাসের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।
মান্নান ও তার ভাইদের কোণঠাসা করতে রাতারাতি গ্রামের কিছু মাতব্বর একজোট হন। পরবর্তীতে মান্নানের বাড়ির পাশে তাদের ভোগদখলকৃত ২০ শতক জমিতে ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের প্রস্তাব দেন মাতব্বররা। তারা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাতের আঁধারে মান্নানের দখলকৃত জমির সকল গাছপালা, সবজি বাগান নষ্ট করা হয়।
মান্নান ও তার পরিবারকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে একঘরে করে রাখে মাতব্বররা। সম্প্রতি ওই জায়গায় মান্নানের ভাই মোস্তফা গাছ থেকে তাল পাড়তে বারণ করায় অপর ভাই মোতালেবকে রনির নেতৃত্বে মারপিট ও তার কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। সিংড়া থানায় মোতালেবের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ রনিসহ তিনজনকে আটক করে।
আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা ৪ ভাই। এখানে আমরা আদি বাসিন্দা। আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন। বাড়ির পাশে মসজিদে আমরা দু’শতক জমি দান করে মসজিদ নির্মাণ করেছি। সম্প্রতি পীরস্থানের জমিতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা ছিলো আমাদের। কিন্তু গ্রামের কয়েকজন মিলিত হয়ে সেখানে একজনকে বসতবাড়ি করতে সহযোগিতা করেছে। আমরা প্রতিবাদ করায় গ্রামের কিছু মানুষ একজোট হয়। বর্তমানে আমাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। গ্রামের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। মূলত আমাদের গ্রামছাড়া করতে মরিয়া ওই পক্ষ।
প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম জানান, আব্দুল মান্নান ও তার ভাইয়েরা খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের ওপর অন্যায় ও জুলুম করা হচ্ছে। আমি সত্য কথা বলায় আমার বাড়ির সামনে বেড়া দেয়া হয়েছে। আমার যাতায়াতে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাকে অকট্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
গ্রাম থেকে বিতাড়িত ফটিক বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। মান্নানের পক্ষ নেয়ায় আমাকে মারার হুমকি দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। খুন জখমের হুমকি দেয়া হয়। রাতে দরজা, জানালায় এসে হুমকি দেয়া হয়। আমার তিন মেয়ে। একটি মেয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়ছে। তার ভবিষ্যৎ ভেবে গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি। আমার ভাইয়ের বাসা খোলাবাড়িয়ায় আশ্রয় নিয়েছি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রাম্য মাতব্বর রেজাউল ও আব্দুর রশিদ জানান, মান্নান ও তার ভাইয়েরা সমাজে নানারকম বিশৃঙ্খলা তৈরি করার কারণে গ্রামবাসী তাদের এড়িয়ে চলে। একঘরে করে লাখা হয়েছে অভিযাগটি সঠিক নয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মান্নান ও তাদের পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। ফটিক গ্রাম ছেড়েছে, সে একজন নিরীহ মানুষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ জানান, তাদের একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমি এখনো শুনিনি। তবে এর সত্যতা পাওয়া গেলে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করব।
সিংড়া থানার ওসি নুর-এ-আলম সিদ্দিকী জানান, একঘরে করার বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। এর আগে এ বিষয়ে মামলা হয়েছিল, পুলিশ আসামিদের আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। একঘরে করার সত্যতা পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র : জাগো নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।