বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘একজন ভালো আর সবাই খারাপ-আওয়ামী লীগ আমলের এ প্রচার এখনো চলছে। এ রকম বিষয় আমরা ১৬ বছর ধরে দেখছি। দুঃখজনক, ৫ আগস্টের পরও সেটির পরিবর্তন হয়নি। এটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয় ও অত্যন্ত জরুরি। এটার পরিবর্তন হতে হবে।’ দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন, ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে।’
গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে দলের ভিতর ক্ষোভ-অসন্তোষের মধ্যেই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর এই বার্তা দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নয়, মুখ্য ধানের শীষ, দল এবং দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা।’ ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগরী উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দল সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ। ছাত্রদলের সারা দেশের ৭৫টি ইউনিটের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে মতামত দেওয়ার অধিকার সবার আছে। বক্তব্য দেওয়ার অধিকারও রয়েছে। কিন্তু একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। একজন বিশেষ কেউ ভালো বাকি সবাই খারাপ, এটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক ব্যাপার।’ বিএনপির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘দল ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে’-এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালার আয়োজন করছে বিএনপি। এ অনুষ্ঠান শুক্রবার ছাড়া ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেবেন। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের পর হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।
দলীয় মনোনয়ন সম্পর্কে ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘কমবেশি যেটা ভালো মনে হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে; হয়তো তুমি যাকে পছন্দ করতে, তিনি মনোনয়ন পাননি। যিনি পেয়েছেন তার সঙ্গে তোমার যোগাযোগ কম। তুমি তো প্রার্থীর জন্য নয়, তুমি ধানের শীষের জন্য, দলের জন্য কাজ করবে। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য দল, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রতীক।’ তিনি বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যাহত করতে বহু ষড়যন্ত্র চলেছে, এখনো চলছে। সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে। আন্দোলনের সময় যেমন জনগণকে বোঝানো হয়েছিল, তেমন দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তাদের বোঝাতে হবে, সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আগামী দুই মাস বিএনপির উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এটা আজকের অঙ্গীকার।’ তিনি ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করবে তা সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির এই কান্ডারি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। কারণ সেখানে কোনো জবাবদিহি ছিল না। একমাত্র গণতন্ত্রই সমাজে, দেশে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে।’
জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে দেশের মানুষ। মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে দেশের গৃহবধূ, মুদি দোকানদার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সিএনজিচালক, বাসের হেলপার থেকে শুরু করে সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



