জুমবাংলা ডেস্ক : ‘রাজাবাবু’র কথা মনে আছে নিশ্চয়? ২০১৮ সালের কোরবানির ঈদের সময় ‘রাজাবাবু’ নামের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় নিয়ে সারাদেশে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের কৃষক খান্নু মিয়া।
সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় ঈদের আগের রাতে বিক্রি করেছিলেন ‘রাজাবাবু’কে।
খান্নু মিয়ার এবারের চমক ‘ভাগ্যরাজ’! উচ্চতা ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি, বুকের বেড় ১২০ ইঞ্চি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খান্নু মিয়া সনাতন পদ্ধতিতে নিজ সন্তানের মতো যত্নে পেলে-পুষে বড় করেছেন এ ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টিকে।
এবারের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন স্থানে আলোচনার শীর্ষে আছে ভাগ্যরাজ।
যদিও গত বছরও ঈদের সময় ভাগ্যরাজকে হাটে উঠিয়েছিলেন খান্নু। কিন্তু সঠিক মূল্য না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিক্রি করেননি। এবার আর হাটে নিতে চান না ভাগ্যরাজকে, বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চান।
জানা গেছে, খান্নু মিয়ার পরিবারের দাবি, ওজনের দিক থেকে দেশে ‘ভাগ্যরাজ’ই এখন সবার ওপরে। প্রায় ২ টন ওজনের ভাগ্যরাজকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কেউ বাড়ি থেকে কিনে নেবে সে আশায় রয়েছে গরুটির লালন-পালনকারী কৃষক পরিবারটি।
দেখতে অনেকটা হাতির মতো বিশাল আকৃতির গরু। হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি সাদা শরীরে কালো চক্কর, লম্বা শিং, উঁচু খুড়া, ঝুলে থাকা গলাকম্বল প্রায় মাটি ছুঁই ছুঁই করছে। ভাগ্যরাজের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, উচ্চতা ৬ ফিট ৮ ইঞ্চি, বুকের ঘের ১০ ফুট, ওজন প্রায় ২ টন।
খান্নু মিয়ার ছোট মেয়ে ইতি আক্তার সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গরু মোটাতাজাকরণের প্রশিক্ষণ নেন। সম্বলহীন পরিবারে কিস্তির টাকায় ২০১৭ সালে ২৯ মণ ওজনের ‘লক্ষ্মীসোনা’ নামে একটি গরু পালন করে বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকায়।
‘রাজাবাবু’কে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলে ২০১৮ সালে ৫২ মণ ওজনের রাজাবাবু দেশের খ্যাতি অর্জন করে। খান্নু মিয়া ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে রাজাবাবু নামে গরুটি। পরের বছর পালন করে ‘ভাগ্যরাজ’ গরুটি। ২০১৯ সালে ভাগ্যরাজকে নায্য দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি তারা। এবারের কোরবানির ঈদে বর্তমানে প্রায় ২ টনের ভাগ্যরাজকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান তারা।
দাম একটু কম হলেও বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে আগ্রহী খান্নু মিয়া। করোনা নিয়ে হতাশায় আছে খান্নুর পরিবার, এখনো কোনো ক্রেতা আসেনি তার বাড়িতে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দেলুয়া গ্রামের খান্নু মিয়ার বাড়িতে ‘ভাগ্যরাজ’ নামে ওই বিশাল গরু এক নজর দেখতে ভিড় করেছে মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, সাটুরিয়া, ঘিওর, দৌলতপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলা টাংগাইল, নাগরপুর উপজেলাসহ আরও অন্যান্য স্থান থেকে আসা লোকেরা। এতে খান্নু মিয়ার বাড়ির পাশে বসেছে ভ্রাম্যমাণ পান, সিগারেট ও বাদামের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। ‘ভাগরাজ’র পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত অনেকেই।
খান্নু মিয়ার মেয়ে ইতি আক্তার বলেন, ‘সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালনপালন করা হয়েছে গরুটিকে। অবৈধ ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি গরু পালনে। বর্তমানে ভাগ্যরাজের ওজন প্রায় ২ টন হবে। সৌখিন ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুণছি। গরুটি ২২ থেকে ১৮ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবো।’
খান্নু মিয়ার স্ত্রী পরিষ্কার বিবি বলেন, ‘গরুটি গতবার বিক্রি করতে না পেরে এ বছর অনেক কষ্ট করে পালন করতে হয়েছে। এ বছর গরুটি হাটে না নিয়ে বাড়ি থেকে বিক্রি করতে চাইছি।’
কৃষক খান্নু মিয়া বলেন, ‘ভাগ্যরাজের খাবারের তালিকা বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল। প্রতিদিন গরুটির খাবার খাওয়াতে প্রায় ১৫০০ টাকা ব্যয় হয়। আবার গরম থেকে সুরক্ষার জন্য গরুর জন্য তিনটি সিলিং ফ্যান চলছে নিয়মিত। ২৪ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ বার গোসল করানো হয় ভাগ্যরাজকে। গরুটি এবার হাটে না নিয়ে বাড়ি থেকে ভালো ক্রেতার কাছে বিক্রি করার আশায় আছি।’
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনির হোসেন বলেন, ‘মোটা অংকের মূলধনের ঝুঁকি নিয়ে বৃহদাকার গরু পালন করে পুরো এলাকায় তাক লাগিয়েছে এ পরিবারটি। গরুর চিকিৎসায় নিয়মিত প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গরুটি ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হলে ভবিষ্যতে খামারিরা আরও উৎসাহিত হবে।’
এদিকে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সাটুরিয়া থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাত্রিকালীন টহল জোরদার করেছে বলে জানান সাটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মতিউর রহমান মিঞা। তিনি আরও জানান, কোনো দুষ্কৃতিকারী কোরবানির গরু ও খামারিদের যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে এজন্য রাতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।