ধর্ম ডেস্ক : করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে গত মাসের শুরুর দিকে ওমরাহ স্থগিত করা হয়। অভূতপূর্ব এই পদক্ষেপের সময়ই এ বছরের হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারির পর এবার প্রথমবারের মতো বন্ধ করে দেওয়া হয় মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনা।
গত দুইশ’ বছরের মধ্যে কখনোই বার্ষিক হজ বাতিল করা হয়নি। তবে এবার করোনাজনিত সামগ্রিক পরিস্থিতিতে হজযাত্রীদের প্রস্তুতি ও ট্রাভেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরামর্শ দিয়ে চলতি বছরের হজ বাতিল হবার ভিত্তি স্থাপন করেছে সৌদি আরব। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।
প্রতিবছর পবিত্র হজব্রত পালন করতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ মক্কা যায়। এ বছর জুলাই মাসে হজ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু দেশটিতে দুই হাজার ৯৩২ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৪১ জনের মৃত্যু পর হজ অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবও করোনার বিস্তার রোধে লকডাউন এবং পাশাপাশি কারফিউ জারি করেছে। এছাড়া পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনায় ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইতোমধ্যেই ওমরাহ হজ স্থগিত করে দিয়েছে রিয়াদ।
সৌদির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মদ সালিহ বিন তাহের বানতেন দেশটির একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, যেসব মুসলিম জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ করতে চান; তাদের ‘এই সংক্রমক শেষ’ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।
তিনি বলেন, এই মহামারি সমাপ্ত হয়ে সবকিছু ঠিকঠাক হবার আগ পর্যন্ত আমরা বিশ্বজুড়ে মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অপেক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থতিতে বৈশ্বিক মহামারি থেকে আল্লাহ আমাদের এটা থেকে রক্ষা করুন, মুসলিম ও সৌদি নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগ্রহী রিয়াদ।
বানতেন বলেন, গত ফেব্রুয়ারির শেষ শেষ দিকে মক্কায় ওমরাহ ভিসা স্থগিত হয়ে যাবার পর ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে টাকা ফেরত দিয়েছে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।
শতাব্দীজুড়ে বেশ কয়েকবার হজ বাতিল হয়েছে। তবে ১৯৩২ সালে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর কখনও হজ বাতিল হয়নি। এমনকি ১৯১৭-১৮ সালে যখন স্প্যানিশ ফ্লুতে বিশ্বজুড়ে লাখ মানুষের মৃত্য হয়েছিল তখনও হজ বাতিল হয়নি।
কিন্তু সৌদি আরব যদি ২০২০ সালের হজ বাতিল করে তাহলে ৬২৯ সাল থেকে শুরু হওয়ার পর যে প্রায় ৪০ বার নাটকীয়ভাবে হজ বাতিল হয়েছিল, সেই তালিকায় এটিও যুক্ত হবে। ইতিহাসের সেইসব ঘটনার কয়েকটি তুলে ধরেছে মিডল ইস্ট আই।
৮৬৫: আরাফাত পাহাড়ে গণহত্যা
বাগদাদ কেন্দ্রীক আব্বাসীয় খিলাফাতের সঙ্গে সংঘাতের সময় ইসমাঈল বিন ইউসুফ, যিনি আল-সাফাক নামে পরিচিত, ৮৬৫ সালে পবিত্র আরাফাত পাহাড়ে হজযাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেন। এ কারণে ওই বছর হজ বাতিল হয়ে যায়।
৯৩০: কারমাতিয়ান হামলা
বাহরাইন ভিত্তিক হেটেরোডক্স সেক্ট কারমাতিয়ানদের প্রধান আবু তাহের আল-জানাবি ৯৩০ সালে মক্কায় হামলা চালান।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, কারমাতিয়ানরা পবিত্র নগরীতে ৩০ হাজার হাজীকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ পবিত্র জমজম কূপে ফেলে দেয়। এসময় তারা গ্র্যান্ড মসজিদে লুটতরাজ করে এবং কাবা থেকে কালো পাথর চুরি করে বাহরাইনে নিয়ে যায়।
এরপর মক্কায় কালো পাথর ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত এক দশকের জন্য হজ স্থগিত ছিল।
কারমাতিয়ানরা হলেন একটি ইসমাইলি শিয়া সম্প্রদায় যারা সমতাবাদী সমাজে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তীর্থযাত্রাকে একটি পৌত্তলিক আচার মনে করতেন।
৯৮৩: আব্বাসীয় ও ফাতেমীয় খিলাফাত
রাজনীতির কারণেও হজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ৯৮৩ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় আব্বাসীয় খিলাফাত ও মিশরে ফাতেমীয় খিলাফাতের দুই শাসকের মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে হজ বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তী আট বছর হজ অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে ৯৯১ সাল থেকে আবার হজ শুরু হয়।
১৮৩১: প্লেগ
শুধু সংঘাত ও গণহত্যার কারণেই হজ বাতিল হয়নি। ১৮৩১ সালে ভারত থেকে একটি প্লেগ মক্কায় আঘাত হানে এবং তিন-চতুর্থাংশ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়, বিপজ্জনক ও বন্ধ্যাভূমি কয়েক সপ্তাহ পাড়ি দিয়ে তারা হজ পালন করতে এসেছিলেন।
১৮৩৭-১৮৫৮: বেশ কয়েকটি মহামারি
প্রায় দুই দশকের মধ্যে তিনবার হজ স্থগিত হয়ে যায়। এর ফলে সাত বছর হজ করতে পারেননি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
১৮৩৭ সালে পবিত্র নগরীরে আরেকটি প্লেগ আঘাত হানে। ফলে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত হজ স্থগিত হয়ে যায়।
১৮৪৬ সালে মক্কায় কলেরা আঘাতে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং এটা ১৮৫০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। পরে ১৮৬৫ ও ১৮৮৩ সালে আবারও কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
১৮৫৮ সালে আরেকটি বৈশ্বিক কলেরা মহামারি মক্কায় আঘাত হানে। ফলে মিশরের হজযাত্রীরা ব্যাপক হারে মিশরের লোহিত সাগরের উপকূলে পালিয়ে যায়। তবে সেখানে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।