আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শহরের ধুলোমাখা রাস্তা। তার ওপরই সাদা পোশাকে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন এক সন্ন্যাসিনী। তার সামনে পুলিশের অস্ত্রসজ্জিত জওয়ানরা। পুলিশের প্রতি হাত জোড় করে ওই সন্ন্যাসিনী আত্মিক সন্তানদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য মিনতি করছেন। আত্মিক সন্তানদের ছেড়ে দেওয়ার বদলে নিজের প্রাণ দিতে রাজি এই সন্ন্যাসিনী। মিয়ানমারের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের সামনে হাঁটু গেড়ে এই সন্ন্যাসিনীর মিনতির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। খবর ডনের।
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলি থামাতে মিনতি জানিয়েছিলেন খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনী অ্যান রোজ নু তং। কিন্তু তাতে মন গলেনি সেনাদের। তার সেই আর্জি রুখতে পারেনি পুলিশের বন্দুকের গুলি। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় মিতকিনা শহরে সোমবার ঘটে এ ঘটনা। এ ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে রয়টার্স, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেখানে দেখা যায়, সন্ন্যাসিনীর সাদা পোশাকে অ্যান রোজ নু তং দুজন সশস্ত্র পুলিশ সদস্যের সামনে হাঁটু গেড়ে মিনতি করছেন, তারা যাতে বিক্ষোভকারীদের গুলি না করেন।
কিন্তু বৃথা গেছে সেই আর্তি। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। মাথায় গুলি লেগে লুটিয়ে পড়ে এক কিশোর বিক্ষোভকারী।
এ ঘটনায় মর্মাহত অ্যান রোজ তং টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি আকুতি জানিয়েছিলাম, তারা যেন বিক্ষোভকারীদের না মারে, পরিবারের সদস্যের মত ভেবে যেন দয়া করে। আমি বলেছিলাম, প্রয়োজনে আমাকে মারো, বিক্ষোভকারীদের প্রতি এই নিষ্ঠুরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি যতক্ষণ তারা না দিচ্ছে, ততক্ষণ আমি উঠে দাঁড়াব না।’
তার এই মিনতির প্রতিউত্তরে পুলিশ জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে সড়ক পরিস্কার করতে। তাই তাদের গুলি করা ছাড়া বিকল্প নেই।
এ সময় অ্যান রোজ তং ও পুলিশের একজন সদস্য মাটিতে কপাল ঢুকতে থাকেন। এর মধ্যেই গুলি শুরু হয়ে যায়।
‘আমরা গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। এতে একটা শিশুর মাথা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। রাস্তায় রক্তবন্যা বয়ে যায়। ’
এ সময় অন্তত দুজন বিক্ষোভকারী নিহত ও কয়েকজন আহত হন। আহত কয়েকজনকে ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেদিন পুলিশের কাঁদুনে গ্যাসে কাবু হওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েকজন আহতকে ক্লিনিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সিস্টার তং।
সেই ঘটনার বর্ণনায় অ্যান রোজ তং বলেন, ক্লিনিকের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। এ ঘটনা আমাকে প্রচণ্ড ব্যথিত করেছে। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি, মানুষের জীবন এত সস্তা হতে পারে না।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিায়েছে, শান্তি বজায় রাখতে গত মাসেও বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মাঝখানে অবস্থান নিয়েছিলেন সিস্টার তং।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিসহ নেতাদের গ্রেফতারের পর থেকে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৮০০ জনকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।