জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় অন্ধপল্লীর সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন, তার থেকে অনেক বেশি উৎকণ্ঠিত খাদ্য ও পেটের ক্ষুধা নিয়ে।
তাদের একটিই কথা- ‘ট্রেন বন্ধ থাকলে আমরা খামু কেমনে? বউ-বাচ্চারে কী খাওয়ামু? ভিক্ষা করতে গ্রামে বের হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে মানুষ ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আমাদের করোনাভাইরাসে মরতে অইবো না। কিছু দিন এমনভাবে চললে আমরা এমনেই না খাইয়া মইরা যামু’।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আখাউড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে অন্ধপল্লীর বাসিন্দারা।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধনগর গ্রামের অন্ধপল্লীর ৪০টি পরিবারে ছেলে-বৃদ্ধ, শিশু ও নারী নিয়ে অন্তত শতাধিক অন্ধ সুবিধাবঞ্চিত ভিক্ষুক আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ট্রেনযাত্রীদের ওপর নির্ভরশীল।
তারা আখাউড়া রেলস্টেশনে চলাচলকারী বিভিন্ন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন যাত্রীদের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।
করোনা মহামারীর কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অন্ধপল্লীর বাসিন্দাদের রেলস্টেশনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ভিক্ষা করতে গ্রামে বের হলে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গ্রামের মানুষ ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। তাই দিন আনে দিন খাওয়া অন্ধ জনগোষ্ঠীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
অন্ধপল্লীর রমজান আলী, ওলি আহম্মদ, হোসেন আলী, লাভলী আক্তার, জোহরা বেগম, হাসিনা আক্তার, নার্গিস বেগমসহ ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকরা এ প্রতিবেদককে জানান, ঘরে যা সঞ্চয় ও মজুদ ছিল সব ফুরিয়ে গেছে। বাঁচার তাগিদে ভিক্ষা করতে গ্রামে গেলেও ভাইরাস সংক্রামণের ভয়ে কেউ ভিক্ষা দেয় না। ঘরে খাবারের কিছু না থাকায় রান্নাও বন্ধ।
কালো মিয়া প্রচণ্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে স্ত্রী লাভলীর কাছে খাবার খুঁজে না পেয়ে তাকে মারধর করেন। ঘরের হাঁড়িপাতিল ভাঙচুর শুরু করেন। অন্ধপল্লীর অন্যদের সহায়তায় দুদিন হলো স্বামীকে শিকলবন্দি করে রাখেন স্ত্রী লাভলী।
শিকলবন্দি কালো মিয়ার স্ত্রী লাভলী আক্তার জানান, গ্রামের এক লোকের বাড়িতে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে ওই বাড়ির লোকজন তাকে যেতে নিষেধ করেছেন। ঘরে চাল-ডাল যা ছিল এতদিনে তা ফুরিয়ে গেছে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে রান্নাও বন্ধ। স্বামী, সন্তান নিয়ে উপোস দিন কাটছে তাদের।
লাভলীর মতো অন্ধপল্লীর অন্যরাও জানান, সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের সবার। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসে না। চরম বিপাকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অন্ধপল্লীর বাসিন্দারা।
আখাউড়া উপজেলা অন্ধকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি করিম শেখ (৬৫) বলেন, কদিন ধরে বউ পোলা-মাইয়্যা নিয়া খেয়ে না খেয়ে ঘরে শুয়ে-বসে সময় পার করছি। একদিন খালি (শুধু) মুখোশ (মাস্ক) আর হাত ধোয়ার ওষুধ দিয়ে গেছে। পেটে দেয়ার মতো খাবার তো কেউ দেয় না। ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আর যদি কিছু দিন এমনিভাবে চলতে থাকে, তা হলে ভাইরাসে মরতে অইবো না আমরা ঘরবন্দি থাইকা উপোসে মইরা যামু’।
আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হান্নান ভূঁইয়া স্বপন বলেন, সরকারি কোনো বরাদ্দ এখনও পাইনি। তবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের একটি তালিকা করেছি। খুব দ্রুতই তাদের মাঝে কিছু শুকনা খাবার বিতরণ করা হবে। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।