আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণের চর আসিয়াব শহরে পৌঁছে গেছে দেশটিতে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত তালেবান যোদ্ধারা। এরই মধ্য দেশটির ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৮টিই দখল করে নিয়েছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতও এখন তালেবানের দখলে।
অপরদিকে, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বলেছেন, যুদ্ধ অবসানে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিন্তু পৃথক সূত্র বলেছে যেকোনো মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারেন প্রেসিডেন্ট। ইতোমধ্যে কাবুল এয়ারপোর্টে উপচে পড়া ভীড় শুরু হয়েছে। আফগান এবং বিদেশী নাগরিকদের দেশটি থেকে চলে যাবার হিড়িক পড়েছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ বাহিনী পাঠিয়ে দেশটির বিভিন্ন দূতাবাস ভবন থেকে মার্কিনীদের সরিয়ে নিতে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি শহর দখলে নেয় তালেবান। নতুন দখল করা শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে কালাত, তেরেনকোট, পুল-ই-আলম, ফিরুজ কোহ, কালা-ই-নাও ও লস্করগাহ। এর মধ্যে লগার প্রদেশের রাজধানী হলো পুল-ই-আলম।
বালখ প্রদেশের মাজার-ই-শরিফ শহরেও তীব্র আঘাত হেনেছে তালেবান। উত্তর আফগানিস্তানের এই শহরটি একসময় তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল। বালখ প্রদেশের গভর্নরের মুখপাত্র মুনির আহমেদ ফরহাদ জানিয়েছেন, চতুর্দিক থেকে শহরটিতে হামলা চালিয়েছে তালেবান। এর আগে গত বুধবার আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মাজার-ই-শরিফ সফর করেন। শহরটি রক্ষায় তিনি সেখানকার তালেবানবিরোধী যোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
তালেবান আগ্রাসনে অবশেষে মুখ খুললেন আফগান প্রেসিডেন্ট
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘আপনি যদি তালেবানের কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টি ফেরান তবে দেখতে পাবেন, তারা কাবুলকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এমন সময়ে এ কথা বলেছেন, যখন মার্কিন কূটনীতিকদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত তিন হাজার সেনা আফগানিস্তানে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাজ্য।
আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের লড়াইয়ের বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সংঘাতে শুধু গত মাসেই ১ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে সংঘাতপূর্ণ এলাকা ও শহরগুলো থেকে হাজারো সাধারণ মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ের আশায় রাজধানী কাবুলের দিকে ছুটছে। বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষের জন্য আশপাশের দেশগুলোকে সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এর আগে আফগান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কাবুলের কাছাকাছি এলাকায় তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আফগান সৈন্যরা। তাদের কাবুলে প্রবেশ যেকোনো ভাবেই প্রতিহত করার চেষ্টায় রয়েছে আফগান বাহিনী।
সবশেষ ১৯৯৬ সালে কাবুল দখল করেছিল তালেবান। চার বছর যুদ্ধ চলার পর বিজয়ী হয়েছিল তারা। ক্ষমতায় বসার পর তারা নারীদের কোণঠাসা করে রাখে, বন্ধ করে দেওয়া হয় তাদের স্কুলে যাওয়া, পর্দা করতে বাধ্য করা হয়, নিষিদ্ধ ছিল খেলাধুলাও। কেউ শরিয়া আইন ভঙ্গ করলে প্রকাশ্যে শাস্তিও দেয়া হতো।
‘আলোচনা’ চলছে : আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ দখল করে তালেবান যখন ক্রমশ রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে – তখন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি টিভিতে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, সামরিক বাহিনীকে পুনরায় সংহত করা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ঘানি তার ভাষণে তিনি পদত্যাগ করবেন কিনা বা বর্তমান পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব নেবেন কিনা এমন কোন ইঙ্গিত দেননি। তবে তিনি বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের চেষ্টায় ‘আলোচনা’ চলছে।
অবশ্য মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের সবশেষ মূল্যায়নে বলছে, তালেবান আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কাবুলের দিকে এগুনোর চেষ্টা করতে পারে। কাবুল প্রদেশের কাছাকাছি এলাকায় তালেবান অবস্থানগুলোতে মার্কিন বাহিনী সমপ্রতি বিমান হামলাও চালিয়েছে। টিভিতে ভাষণের সময় প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে গম্ভীর দেখাচ্ছিল। তার পেছনে ছিল আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা। তবে স্ত্রী-পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে আফগানিস্তানে। যদিও প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বলেন, ‘আপনাদের কথা দিচ্ছি, কিছুতেই দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে দেব না আমি। হিংসার কবলে যেতে দেব না। মানুষ যাতে ভিটেমাটি ছাড়া না হন, তা নিশ্চিত করেই ছাড়ব। আফগান নাগরিকদের উপর যুদ্ধ এবং হত্যালীলা আসতে দেব না। গত ২০ বছর ধরে একটু একটু করে যা গড়ে তুলেছি আমরা, কিছু ধ্বংস হতে দেব না।’
কান্দাহার রেডিও স্টেশনও তালেবানের দখলে
তিনি জানান, তালেবান মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে তার সরকার, নতুন করে সেনাবাহিনীকে সাজানো হচ্ছে এবং এ নিয়ে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন। যদিও পরিবার নিয়ে পালানোর আগে গনি মুখরক্ষা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীদের।
আফগানিস্তানের একের পর এক এলাকা দখল করছে তালিবান। সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে ভারত যদি আফগানিস্তানকে সাহায্য করার জন্য সেনা পাঠায় তা হলে ভাল হবে না বলে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।