জুমবাংলা ডেস্ক : ‘জাফলং খাদক’ আলিম উদ্দিন এখন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সালাম নামের এক যুবকের হাত-পা ভেঙে দেয়ার ঘটনায় সে কারান্তরীণ। ঘটনার পর থেকে জাফলংয়ে আলোচিত হচ্ছে আলিমের নাম। কারান্তরীণ আলিমেরও পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। কারাগারে গিয়ে নিজের উদ্যোগে গরু ও খাসি জবাই করে সকল কয়েদি ও হাজতিকে এক বেলা খাইয়েছেন তিনি। প্রায় ৭ লাখ টাকা দিয়ে গোয়াইনঘাট থেকে ৬টি গরু ও ৩টি খাসি ক্রয় করে এনে কয়েদিদের জন্য এই ভূরিভোজের আয়োজন করেন।
আর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সিলেটে তোলপাড় চলছে। কারা অভ্যন্তরের এই ঘটনাটিকে অনেকেই কারা আইনের পরিপন্থি বলে জানিয়েছেন। সিলেটের জাফলংয়ের নয়াবস্তির বাসিন্দা আলিম উদ্দিন।
গত কয়েক বছরে জাফলংয়ে অবাধে পাথর ও বালু লুটপাটের ঘটনায় এলাকায় আলোচিত নাম আলিম উদ্দিন। জাফলং সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার পরও অবাধে পাথর উত্তোলন করে জুম মন্দির সহ আশেপাশের বসতি এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। এর জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা আলিম উদ্দিন ও সহযোগীদের দায়ী করেছেন। গত ১৭ই অক্টোবর জাফলং নয়াবস্তি এলাকায় আলিম ও তার সহযোগীরা বালু লুটপাট করছিলো।
এ সময় জাল নিয়ে মাছ ধরছিলেন নয়াবস্তিরই বাসিন্দা সালাম মিয়া। বালু তোলার মেশিন দিয়ে জাল ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে আলিম তার সহযোগীরা সালামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আহত অবস্থায় সালামকে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরেক দফা হাতুড়ি দিয়ে পিটানো হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে আলিম উদ্দিনকে করা হয় প্রধান আসামি। পরে আলিম উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে গত ১৮ই নভেম্বর সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে জামিনের জন্য হাজির হন আলিম উদ্দিন, তার ভাই শাহজাহান সহ অন্যরা। এ সময় আদালত আলিম ও শাহজাহানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে আলিম উদ্দিন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি সেলে রয়েছে। কারা সূত্র জানায়, আলিম উদ্দিন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কারান্তরীণ হওয়ার পর সকল হাজতি ও কয়েদিকে একদিনের খাবার খাওয়ানোর প্রস্তাব করেন। এতে রাজি হন কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রায় ৭ লাখ টাকা দিয়ে ৬টি গরু ও ৩টি খাসি কিনে গত সোমবার আলিমের স্বজনরা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। সঙ্গে পাঠানো হয় প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, মসলা সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। কারা অভ্যন্তরেই বাবুর্চিরা গরু জবাই করে রান্না করেন। পরে কারা অভ্যন্তরে থাকা প্রায় ২৮০০ বন্দির মধ্যে এই খাবার পরিবেশন করা হয়।
কারাগারে গরু ও খাসি যে পিকআপ ভ্যানে নিয়ে আসা হয়েছিলো সেই পিকআপের চালক আব্দুস সালাম সাংবাদিককে জানিয়েছেন, ‘গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় বাজার থেকে ওই গরু ও খাসি ক্রয় করা হয়। পরে সেগুলো আমার পিকআপ ভ্যানে করে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন হাজতি জানিয়েছেন, আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে সোমবার সবাইকে খাওয়ানো হয়। এবং জানিয়ে দেয়া হয় আলিম উদ্দিনের সৌজন্যে এই খাবারগুলো পরিবেশন করা হয়। এদিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা হাজতি আলিম উদ্দিনের সৌজন্যে গরু ও খাসি জবাই করে খাবারের আয়োজন করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আব্দুল জলিল। তিনি জানান, কারা নিয়মেই আছে কেউ যদি কোনো কিছু দান করে তা গ্রহণ করা যাবে। কারাগারে থাকা হাজতির পক্ষে সে ব্যবস্থা করা হলে কোনো আপত্তি নেই। এ কারণে রিসিট প্রদানের মাধ্যমে তিনি আলিম উদ্দিনকে খাওয়ানোর অনুমতি দিয়েছেন।
এই রিসিটটি তার কাছে রক্ষিত আছে বলে জানান তিনি। এদিকে আলিম উদ্দিন যে মামলায় কারাগারে সেই মামলার বাদীপক্ষ জানিয়েছেন কারাগারে ভূরিভোজের আগেই জাফলংয়ে চাউর হয়ে যায় কারা অভ্যন্তরে আলিম উদ্দিনের সৌজন্য সবাইকে খাওয়ানোর খবরটি। গত এক সপ্তাহ ধরে এই খবরটি জাফলংয়ে রটেছে। এখন প্রায় সবারই জানা আছে সে খবরটি। আর খবর রটানোর মাধ্যমে কারা অভ্যন্তরেও আসামিদের দাপট দেখানো এবং সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি জানান দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন ‘কারা অভ্যন্তরে এভাবে গরু, খাসি জবাই করে খাওয়ানোর কোনো নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই। কারণ বাইরের খাবার খেয়ে যদি কোনো বন্দি মারা যায় এর দায়ভার কে নেবে? আর সরকারের তরফ থেকে খাবার দেয়া হচ্ছে। কোনো হাজতি কিংবা কয়েদির পক্ষ থেকে খাবার দেয়া হবে কেন? সূত্র : মানবজমিন
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।