জুমবাংলা ডেস্ক: চিয়া সিড চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাদারীপুরের দুই কৃষক। কৃষকরা আশাবাদী নতুন জাতের এই ফসল নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে মাদারীপুরের কালকিনিতে চাষ করা হচ্ছে সুপারফুড চিয়া সিড। উপজেলার সাহেবরামপুর ও রমজানপুর ইউনিয়নের দুইজন কৃষক প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে চিয়া সিড চাষ করেছেন। আশানুরূপ ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা। এই নতুন ফসল চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হবে মাত্র ১০ হাজার টাকা এবং আয় আসবে প্রায় লাখ টাকা। তাই সুপারফুড চিয়া সিড চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব হবে; এমন ধারণা থেকে প্রবাস ফেরত কাঞ্চন সুপারফুড চিয়া সিড চাষ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিয়া সিড মধ্য আমেরিকার একটি উদ্ভিদ। পুদিনার একটি প্রজাতি। বিভিন্ন পোষক পদার্থের উপস্থিতির জন্য এটিকে সুপারফুড বলা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে চিয়া সিড উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। বীজ উৎপাদন হয় ৮০-১০০ কেজি। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ৮০০-১২০০ টাকা দরে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিয়া সিড বপন করতে হয়। ফলন ঘরে তোলা যায় মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। চিয়া সিড উৎপাদনে জৈব সারের ব্যবহার বেশি করতে হয়।
তবে বিভিন্ন গবেষণার সূত্র উল্লেখ করে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, শর্করা, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাসসহ একাধিক খনিজ পদার্থ রয়েছে চিয়া সিডে। এছাড়া, একাধিক ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে চিয়া সিডে। রয়েছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও। ফলে শরীরে পাচনতন্ত্র ও মেটাবলিজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী চিয়া সিড। চিয়া সিড পাচন প্রক্রিয়া ঠিক রেখে কমাতে পারে ওজন। এছাড়া, শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও সহায়ক। চিয়া সিড খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের সমস্যা কমে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এই বীজ।
উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আন্ডার চর গ্রামের প্রবাস ফেরত কৃষক কাঞ্চন বেপারী বলেন, আমি সৌদি আরব থেকে দেশে এসে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই নতুন ফসল ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করছি। কৃষি বিভাগ বীজ সরবরাহ করেছে এবং চাষ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে। এর আগে এই ফসল কোনোদিন দেখিনি। কৃষি বিভাগ থেকে জেনেছি, এই ফসল মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বাজারে এই ফসলের মূল্য অনেক বেশি। ভালো ফলন ও বাজার সুবিধা পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই ফসল চাষ করব। তবে এ ফসলে খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি। তাই আমি কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারবো বলে আশা করছি।
রমজানপুর এলাকার কৃষক সিদ্দিক শিকদার বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে চিয়া সিড চাষ করেছি। আশানুরূপ ফল পাব বলে প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, চিয়া সিড হলো সুপারফুড। উৎপাদিত চিয়া সিড আমি নিজে খাব এবং বিক্রিও করব। বাজার সুবিধা পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ফলে তারা আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই বীজ চাষে আগ্রহ পাবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিল্টন বিশ্বাস বলেন, এখানের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরূপ চিয়া সিড উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সুপারফুড চিয়া সিড চাষে খরচ অনুপাতে লাভ অনেক বেশি হওয়ায় স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বেশি কৃষককে চিয়া সিড উৎপাদনে আগ্রহী করা হবে। বাংলাদেশে সম্প্রতি এই বীজটির ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশে এই ফসল আবাদ হলে আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। বরং পরিকল্পিতভাবে ফসলটি আবাদ করতে পারলে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।