আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইতিহাসে বিভিন্ন সময় তথ্য বিকৃত করা হয়। এতে প্রকৃত সত্যটা উঠে আসে না। এটা হয় কখনও অজ্ঞানতার কারণে। আবার কখনও ইচ্ছাকৃতভাবেই আসল ইতিহাস লুকিয়ে রাখতে এটা করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কাশ্মীর হামলা নিয়ে ইতিহাস বিকৃত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বার বার। এই অভিযোগ যে একেবারেই মিথ্যা নয় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দি ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে দীপঞ্জন রায় চৌধুরী লিখেছেন, কাশ্মীরে যদি কোন ‘ব্ল্যাক ডে’ থাকে তবে সেটি ২২ অক্টোবর। কেননা এইদিন পাকিস্তান কাশ্মীরের ইতিহাস বিকৃত করেছিল।
তিনি বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে ভুল তথ্য আর মিথ্যা প্রচার করে পাকিস্তান কাশ্মীরীদের মন বিষিয়ে দিয়েছে। এখনও অনেকের কাছেই গোপন রয়ে গেছে কাশ্মীরের আসল ইতিহাস।
তিনি বলেছেন, ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তান কাশ্মীরের মহারাজার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু ২২ অক্টোবর পাকিস্তান একতরফাভাবে চুক্তিটি ভেঙে দেয় এবং পাকিস্তান-সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার বিদ্রোহী নাগরিক এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের আদিবাসীরা কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী উদ্ধার তৎপরতা শুরু না করা পর্যন্ত তারা সেখানে লুটপাট চালায়। কাশ্মীরী জনগণের ওপর পাক-সেনা ও তাদের মদদকারী পাঠান বা অন্যান্য জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ শুরু করে ভয়ঙ্কর অত্যাচার।
এই আগ্রাসনে পাকিস্তান নিজেদের ভূমিকা গোপন করতে সক্ষম হয়েছিল। সেসময় তারা জানিয়েছিল, এই হামলায় তাদের কোনো হাত নেই। জম্মু ও কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক হত্যার প্রতিক্রিয়ায় আদিবাসীরাই এই হামলা করছিল।
কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা পেতে ভারতীয় সেনার সাহায্য চান। ২৭ অক্টোবর ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরীদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এদিকে পাকিস্তান দাবি করে, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা সেদিন অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল।
পাকিস্তান দশকের পর দশক ধরে ২৬ অক্টোবর ‘ব্ল্যাক ডে’ বা কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যে তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে আসছে এই প্রথমবারের মত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাকিস্তানি এক সেনা কর্তার বয়ানেই উঠে এসেছে প্রকৃত সত্য। পাক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আকবর খান তার লেখা বইতে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন কাশ্মীর আক্রমণের যাবতীয় কৌশল ও ঘটনা প্রবাহ।
‘রেইডার্স ইন কাশ্মীর’ বা ‘কাশ্মীরের হামলাকারী’ বইটিতে আকবর তুলে ধরেছেন পাকিস্তানি জননেতারা কীভাবে সেনাকে ব্যবহার করেছিল সেদিন। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, কাশ্মীর দখল। তার জন্য সেখানকার মানুষদের খুন বা ধর্ষণ করতেও পিছপা হয়নি সেনারা।
আকবর খান তার বইতে উল্লেখ করেছেন, তখন তিনি অস্ত্র ও সরঞ্জাম পরিচালক ছিলেন। তিনি পাঞ্জাব পুলিশকে ৪ হাজার সামরিক রাইফেল ইস্যু করার জন্য পূর্ববর্তী সরকারের অনুমোদন ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং রাইফেলগুলো পুলিশের কাছ থেকে আদিবাসীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
কাশ্মীরে ব্যবহারের জন্য পুরানো গোলাবারুদ গোপনে স্থানান্তরিত করা হয়। এমনকি তিনি কাশ্মীরীদের তাদের দিকে টানতে ‘কাশ্মীরের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিদ্রোহ’ শীর্ষক পরিকল্পনারও ছক কষেন। একইসঙ্গে সড়ক বা বিমান পথে ভারতীয় সেনারা যাতে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সশস্ত্র পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
বইটিতে বলা হয়েছে,পুরোটাই হয়েছে পাকিস্তানি রাষ্ট্রনায়কদের ইচ্ছায়। মোহম্মদ আলি জিন্নাহসহ পাকিস্তানের নেতারা সবাই এই হামলার ব্যাপারে জানতেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।