জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামের উলিপুরে পন্ডিত মহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী জুই আক্তার (১৫) বখাটে কিশোর গ্যাংদের কু-প্রস্তাব ও নানা রকম ইভটিজিং এবং অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
মুমুর্ষ অবস্থায় প্রথমে তাকে উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জুই এর বাবা জুলফিকার আলী জানান, কিশোর গ্যাং এর অন্যায় এবং বাড়ী ভাংচুরের প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মিলন মিয়াকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে মারাত্মক জখম করে।
সে বর্তমানে মুমুর্ষ অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিশোর গ্যাং এর ভয়ে জুইয়ের বাবা ইলেকট্রেশিয়ান জুলফিকার আলী মানিক ও বাড়ীর সদস্যরা বাড়ী থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এখন বাড়ীতে ঢুকতে পারছে না। উলিপুর থানায় এ কিশোর গ্যাং এর অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে ধরেনি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সন্ধ্যায়।
জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার নারকেলবাড়ী তেলিপাড়া গ্রামের ইলেকট্রেশিয়ান জুলফিকার আলী মানিক এর মেয়ে জুই আক্তার। ছোটবেলা থেকে মেধাবী জুই। তার বাবা জানায়, জুই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বলে শত কষ্টেও তাকে টিউশনি সহ সমস্ত খরচ দেন প্রতিনিয়ত। বেশ কিছুদিন থেকে এলাকার কিশোর শেখ ফরিদ, সেনা মিয়া তার মেয়েকে প্রেম , বিয়ে সহ নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু জুই তাতে রাজী হয়নি।
এ কারণে ঐ দুজন সহ মামুন, খোকন, আঙ্গুর বিপুল, শাহীন, মুকুট, মনছুর প্রায় প্রতিদিন জুই প্রাইভেটে যাবার সময় ও বাড়ী থেকে কোথাও যাবার সময় নানা রকম ইভটিজিং করতো। এবং নানা রকম কু-প্রস্তাব দিত। তাদের এ অত্যাচার নীরবে সহ্য করতো সে। এক সময় অতিষ্ট হয়ে জুই বাধ্য হয়ে ঘটনা তার মাকে বলে। তার মা তার বাবাকে জানালে বিষয়টি ঐ কিশোরদের অভিভাবকদের জানায়। এটাই অপরাধ জুই এর বাবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ কিশোর গ্যাং সোমবার দুপুরে জুই এর বাড়ীতে এসে তার বাবাকে বেধরক মারপিট করে।
ঘটনাটি উলিপুর থানায় অবহিত করলে পুলিশ আসলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে ঐদিন বিকালে আবার এসে বাড়ী ভাংচুর করে এতে বাধা দেয় প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মিলন মিয়া। এর পর কিশোর গ্যাং মিলন মিয়াকে দোকান থেকে তুলে পাশ^বর্তী একটি বিলের কাছে এলোপাথারী ভাবে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে বিলের পানিতে ফেলে যায়। একের পর এক ঘটনায় জুই সহ্য করতে না পেরে বাড়ীর মানুষদের অজান্তে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
বাড়ীতে তার অবস্থার অবণতি হলে তাকে প্রথমে উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপালে পাঠানো হয়। বর্তমানে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে সে মৃত্যর সংগে পাঞ্জা লড়ছে। চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে জুই এর পরিবার। সকলে বাড়ী থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রতিবেশী মিলন মিয়ার বাবা আবদুল হাকিম জানান, এই কিশোর গ্যাং গ্রামে প্রায় নানা রকম অত্যাচার করে মানুষের সাথে। ্আমার ছেলে প্রতিবাদ করায় সে মৃত্যু পথযাত্রী। আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই।
ছাত্রী জুই জানায়, ঐ বখাটে যুবকরা প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেটে যাবার সময় নানা রকম ইভটিজিং করে ও কু-প্রস্তাব দেয়। এদের মধ্যে সেনা ও ফরিদ সবচেয়ে বেশী ইভটিজিং করতো। নীরবে সহ্য করলেও যখন পারিনি তখন মাকে ঘটনাটি বলেছি। আমি ঐ বখাটেদের শাস্তি চাই।
প্রতিবেশী রনি জানান, এই কিশোর গ্যাং ঐ এলাকায় মাদক সহ নানা রকম অন্যায় অত্যাচার করে আসছে। মানুষ ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি এতদিন। তারা এ অন্যায়ের বিচার চান।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও বলেন আমি এর আগে এলাকায় ইভটিজিং এর অভিযোগ পাইনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।