করোনাভাইরাসের আঘাত টালমাটাল করেছে সারাবিশ্বকে। দেশ-বিদেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই পড়েছে এই ভাইরাস সংক্রমণের নেতিবাচক প্রভাব। আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম অংশ প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই কথা। কেবল এই প্রবাসী আয় কমেইনি, বরং বিভিন্ন দেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরতে হয়েছে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী শ্রমিককে।
করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকেরা দেশে ফিরে বিনা জামানতে কম সুদে ঋণ নিতে পারবেন। সে ব্যবস্থা করে দেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এরই মধ্যে দুইশ কোটি টাকার একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এই ঋণ কিভাবে ও কী উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের দেওয়া হবে, সেসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জনশক্তি কর্মংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এর মধ্যে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, ইতালি, ওমান, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, ফ্রান্স, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া— এই ১৫ দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক সবচেয়ে বেশি। রেমিট্যান্সও বেশি আসে এসব দেশ থেকে। এসব দেশের অর্থনীতিতেও আঘাত হেনেছে করোনা, যার প্রভাব পড়েছে এসব দেশে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের ওপররও।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, কমপক্ষে ২০ লাখ শ্রমিক করোনাভাইরাসের কারণে সংকটে রয়েছে। তাদের মধ্যে স্থায়ী চাকরিজীবীদের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে অস্থায়ীদের অবস্থা শোচনীয়। কাজ বন্ধ বলে আয়ও বন্ধ। জমানো টাকাও শেষ হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। এসব শ্রমিকদের তালিকা তৈরিতে কাজ করছে স্থানীয় বাংলাদেশি মিশন।
প্রবাসী এসব শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা সারাবাংলাকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশগুলোর সরকার যেন আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়। আর যারা আটকা পড়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রবাসীরা দেশে ফিরলে তাদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানান সচিব। বলেন, যারা ফিরে আসবে এবং এরই মধ্যে যারা চলে এসেছেন, তাদের সরকার কম সুদে ঋণ দেবে, যেন এই টাকা দিয়ে দেশে ফিরে শ্রমিকেরা ব্যবসা কিংবা আয়ের পথ তৈরি করতে পারেন। প্রথম পর্যায়ে তাদের জন্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত যারা ঋণ নেবেন, তাদের জামানতের দরকার হবে না। তবে ঋণ গ্রহীতাকে বিদেশ থেকে ফেরত আসার প্রমাণ তুলে ধরতে হবে। আর এই ঋণের সুদ হবে সর্বনিম্ন ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪ বা ৫ শতাংশ। কেবল এবং কেবল বিদেশ ফেরতরাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ সহায়তা পাবেন।
এর আগে, গত ৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছিলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের কথা সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে। বিদেশে অবস্থানকালীন তাদের সুরক্ষাসহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক। প্রবাসীরা দেশে ফিরলে যেন বিপদে না পড়ে যান, সে বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়েও ভাবছে সরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।