জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাদেক হোসেন খোকা মারা গেছেন। নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে আজ দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির প্রভাবশালী এবং অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তবে তার চেয়েও বড় কথা হলো, তিনি সম্ভবত তারেক রহমানের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা বিএনপির শেষ নেতা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে তারেকের সমালোচকের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে এলো।
তারেক রহমানের সঙ্গে বিরোধ করে যারা দলের মধ্যে দাপটের সঙ্গে টিকে ছিলেন, তাদের মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা অন্যতম। ২০০১ সালে যখন তারেক রহমান হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিকল্প সরকার গঠন করেছিলেন, তখন বিএনপির যেসব নেতৃবৃন্দ কোনোদিন হাওয়া ভবনে যাননি তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। সেজন্য তারেক রহমানের সঙ্গে খোকার সম্পর্ক খারাপ ছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তাকে পছন্দ করতেন এবং ঢাকায় তার বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে খালেদা-তারেকের পক্ষে তাকে বাদ দেওয়া সম্ভবপর হয়নি।
বিএনপির রাজনীতিতে সাদেক হোসেন খোকা বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম পরামর্শক এবং শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু খোকার বেশকিছু পরামর্শ বেগম জিয়া গ্রহণ করেননি। বেগম খালেদা জিয়া খোকার যে পরামর্শগুলো গ্রহণ করেননি, তার কয়েকটি এরকম-
১. তারেককে রাজনীতিতে না আনা
১৯৯৬ এর নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি ঘটে। এই নির্বাচনে ঢাকার সবগুলো আসনে বিএনপি পরাজিত হলেও সাদেক হোসেন খোকা সূত্রাপুর-কোতয়ালী আসন থেকে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর থেকে আস্তে আস্তে তারেক রহমান রাজনীতিতে জায়গা দখল করতে থাকে। এসময় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাদেক হোসেন খোকা তারেক রহমানকে এখনই রাজনীতিতে না আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, বেগম জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। এসময় তারেককে নেতৃত্বে আনা হলে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেবে এবং একটি ভুলবার্তা সবার কাছে যাবে। কিন্তু বেগম জিয়া খোকার এই কথা শোনেননি। তারেক রহমান প্রথমে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০১ এর নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনের কৌশল প্রণয়নের মূল ব্যক্তি ছিলেন তারেক রহমান।
২. মামুনকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া
২০০১ সালের নির্বাচনের পরেই হাওয়া ভবনের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য, টেন্ডারবাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য শুরু হয়। এসব অপকর্মের হোতা হিসেবে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের নাম সবার আগে চলে আসে। মামুন ছিলেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। এসময়েও সাদেক হোসেন খোকা কম প্রভাবশালী ছিলেন না। তিনি একাধারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র, এমপি, মৎস্য ও প্রাণী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ স্নেহভাজন খোকা তার সঙ্গে দেখা করে মামুন যে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি করছে তার ফিরিস্তি দেন। তখন খোকা খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার। কিন্তু বেগম জিয়া খোকার এই পরামর্শটিও শোনেননি।
৩. ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত এবং বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর একটি। এই পুরো ঘটনার পুরো নীল নকশা তৈরি করেছিলেন তারেক রহমান। বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরকে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরেই সাদেক হোসেন খোকা ছুটে যান বিএনপির কার্যালয়ে, সেখানে তিনি প্রকাশ্যে তারেক রহমানকে গালাগাল করেছিলেন। তারেক রহমানের কারণে বিএনপির সর্বনাশ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন। এরপর তিনি বেগম জিয়ার সঙ্গে সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেন। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা চাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধও করেন। তিনি আরও বলেছিলেন, এর মাধ্যমে রাজনীতিতে যে বিভাজনরেখা তৈরি হলো, তা প্রতিশোধের রাজনীতিকে উসকে দেবে, এর ফলে বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু বেগম জিয়া ঐ দুঃখ প্রকাশের ঘটনা শোনেননি, বরং তিনি জজ মিয়ার নাটক সাজিয়ে এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
৪. হাওয়া ভবন বিলুপ্ত করা
২০০৪ সালের পর থেকেই প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা এবং প্রয়াত তরিকুল ইসলামসহ কয়েকজন হাওয়া ভবনকে বিকল্প সরকার হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক রাজনীতি বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলেও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করেন। তখনই সাদেক হোসেন খোকা হাওয়া ভবন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া সেই পরামর্শকে পাত্তা দেননি।
৫. তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব না দেওয়া
২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। সেটি না করে বেগম জিয়া গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তারেককে নতুন পদ দেন, সেটি হলো দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ। এরপরেই খোকা রাজনীতি থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
৬. ২০১৪ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা
বেগম জিয়ার কাছে সাদেক হোসেন খোকার শেষ পরামর্শ ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। এ ব্যাপারে খোকা প্রকাশ্যে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি নির্বাচনে যাওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া তার কথা না শুনে ঐ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ঐ নির্বাচন বর্জনের কারণেই বিএনপির আজকের এই পরিণতি।
সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর পরে বিএনপি যেমন শোকাচ্ছন্ন, তেমনি বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে একজন স্পষ্টবাদী রাজনীতিবিদকে হারালো বিএনপি। দলের অনেক নেতাই বলছেন যে, ঐ সময় যদি পরামর্শগুলো বেগম জিয়া শুনতেন, তাহলে হয়তো বিএনপির আজ এই হাল হতো না।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।