মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আপন চাচাকে মেরে আহত করে বড় ভাইয়ের পুত্ররা। শুধু চাচাকেই নয়, চাচি ও চাচাতো ভাই এবং আরেক চাচার ছেলে ও মেয়েকেও পিটিয়ে আহত করে। গত বুধবার (২৩ জুন) মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর সদর ইউনিয়নের গোবিন্দল গ্রামের নৈলাইনে এই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সিঙ্গাইর উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা।
আহতরা হলেন, গোবিন্দল গ্রামের নৈলাইনের মৃত হাসান আলী দেওয়ানের ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ রাজা (৪৮), আব্দুর রশিদের মেয়ে খাদিজা আক্তার (৩৩) ও ছেলে ফরিদ মিয়া। এছাড়া রাজা মিয়ার ছেলে সাব্বির হোসেন ও স্ত্রী লাভলী আক্তারও আক্রমনের শিকার হক। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেন।
ওই ঘটনায় আহত রাজা মিয়া স্ত্রী লাভলী আক্তার বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। ইতিমধ্যে আলকাছ (৪৫) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
বাকিরা আসামিরা হলেন, আঃ কাদের(৪৮), আঃ মালেক (৪২), সাগড় (৩৯) আশোক আলী (৬৮) রাবিয়া (৬৫), শায়লা (৩৫), মধুমালা (৩২), বৃষ্টি (২৫)।
লাভলী আক্তারের অভিযোগ, রাজা মিয়ার বড় ভাই আশক আলী ও তার পূত্ররা তাদের উপর এই হামলা চালায়। রাজা মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বড়ভাই আশক আলীর কাছ থেকে পৈতৃক জমি কিনে নেয় ছোট ভাই রাজা মিয়া। এরপর সেই জমিতে মাটি ভড়াট করেন তিনি। তাতেই নজর লেগে যায় বড়ভাই আশক আলী ও তার সন্তানদয়ের। জোর করে দখলে নিতে চায় ছোট ভাইয়ের জমি। দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর ধরে এনিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ চলে আসছিল। ছোট ভাই রাজা মিয়া একজন প্রবাসী, প্রবাস থেকে দেশে ফিরে তার জমিতে স্থাপনা করার উদ্দেশ্য টিনের বেড়া দিলে সেটিকে কেন্দ্র করে বড় ভাই এবং বড় ভাইয়ের ৪ পুত্র ও পূত্রবধুসহ গত ২৩ জুন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ছোট ভাই রাজার ও তার স্ত্রী লাভলীর উপর। রাজা মিয়ার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। বাবা মাকে মারতে দেখে ছুটে আসে তাদের সন্তান সাব্বির হোসেন, তাকেও এলোপাথারী পেটায় তারা। আশক আলীর মেজ ভাই আব্দুর রশিদের মেয়ে খাদিজা আক্তার ও ছেলে ফরিদ মিয়া তাদের বাঁচাতে এলে তাদেরও পিটিয়ে যখম করে। তাদের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগে ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। পরে স্থানীয় ও অন্যান্য আত্বীয় স্বজনদের সহযোগীতায় আহতদের সিঙ্গাইর উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। মাথায় গুরুতর জখম হওয়ায় আহত রাজা মিয়াকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতেলে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে পরে উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে আশক আলীর বাড়িতে গেলে, তাদের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বাড়ির সকল ঘরে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, রাজা মিয়া অনেক বছর ধরে এই জমি ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তু রাজা মিয়ার বড়ভাই সেখানে তার জমি রয়েছে বলে ইদানিং দাবি করে আসছে। এনিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের ভাইদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
সিঙ্গাইর সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার খুরশেদ আলম জানান,এর আগে কয়েক দফা তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষে বসা হয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদে ও সিঙ্গাইর সার্কেল অফিসেও বসা হয়েছিল। বৈঠকের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষনিক ভাবে আশক আলী ও তার সন্তানেরা মেনে নিলেও বাড়ি ফিরে ফের চাচাদের সাথে ঝামেলা করতে থাকে। সার্কেল অফিস থেকে আমিসহ ৫ জনের একটি কমিটি করে দেয়। কিন্তু আশক আলী ও তার সন্তানেরা আমাদের অনেক লাঞ্চিত করে। এর ৩ দিন পরেই তারা এই মারামারি করে।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জিয়ারুল ইসলাম জানান, মারামারির ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।