মো. জাকির হোসেন: ঘাতক করোনা কাউকেই ছাড়ে না। কেবল মানুষের জীবন নয়, জীবিকা, অর্থনীতি, শিক্ষা কাউকেই সে ছাড় দেয় না। ওয়ার্লডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩১ মে ভোর পর্যন্ত ৩৫,৫৬,৭২৪ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে করোনা। শত কোটি মানুষের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করোনায়। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষারও মৃত্যু পরোয়ানা ঘোষণা করেছে নৃশংস করোনা। ভয়ংকর করোনার ছোবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। টানা ১৫ মাস ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ভয়ংকর ঘাতকের ভয়ে। চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক। সব গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা রোগে ভুগতে থাকা মানুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যু ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের ক্ষেত্রেও। অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা এবং ক্রমাগত উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে যেসব খাত নানা রোগে ভুগছে সেসব খাত করোনার থাবায় অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের আর্থিক খাতের ভিত্তি সবল হওয়ায় করোনার সর্বনাশা আক্রমণকে প্রতিরোধ করে এগিয়ে চলেছে।
করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবিলা করে আমাদের অর্থনীতি ৫.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিহত করে অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় বহমান থাকবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের ভয়াবহ দুর্নীতি ও বেহাল দশা সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও মনোযোগের কারণে তা ভেঙে পড়েনি। কিন্তু করোনা আক্রান্ত শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে লাইফ-সাপোর্টে রয়েছে। করোনা আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে কিছু মানুষ বিশেষ চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছে। আবার কিছু মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়ার আগেই আমাদের জবাবদিহির কাঠগড়ার দাঁড় করিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। করোনাকালে শিক্ষা ক্ষেত্রেও এমন তুঘলকি বৈষম্য হয়েছে। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার সংসদ টেলিভিশন, বেতার ও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তবে অনেক শিক্ষার্থী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ তথা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। তার মানে ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সংসদ টেলিভিশন, বেতার ও অনলাইনে ক্লাসের সরকারি উদ্যোগের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেননি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণায় প্রকাশ, প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনার এই সময়ে নিয়মিত পড়াশোনার একদম বাইরে রয়েছে। করোনাকালে অনলাইন ক্লাসের বৈষম্য ছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে আরেকটি ভয়াবহ বৈষম্যমূলক ঘটনা ঘটেছে, যা প্রায় আলোচনার বাইরে রয়েছে। করোনার মধ্যেই মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) শারীরিক উপস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে প্রথম সেমিস্টারও সম্পন্ন করেছে। একইভাবে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে, অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার মধ্যেই মেডিক্যাল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা সশরীরে সম্পন্ন হয়েছে। এখন ভর্তি চলছে, অচিরেই হয়তো সশরীরে কিংবা অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ব্যবস্থাপনার ভয়ংকর দুর্বলতা করোনাকালে নগ্নভাবে বেরিয়ে এসেছে। এমআইএসটি, আইইউটি, মেডিক্যাল কলেজগুলো, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন লিখিত কিংবা মৌখিক পরীক্ষা নিতে সক্ষম হলেও প্রায় সবক’টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করোনার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে আগস্ট মাসে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ক্লাস শুরু করতে নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে এইচএসসি পাস করে কেউ কেউ যখন এক বা দুই সেমিস্টার শেষ করবে অন্যরা তখন ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রের এই অবস্থা করোনাকালে কারও ভিআইপি চিকিৎসা, আর কারও চিকিৎসাহীনতার মতো। দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা চলমান ছিল। করোনার কারণে কোনও ক্লাস-পরীক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি। তার মানে করোনা সৃষ্ট কোনও সেশনজট নেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে। সীমিত পরিসরে অনলাইন ক্লাস নিতে পারলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন নিখোঁজ হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষাগুলো পরিচালনা করতে পারেনি। প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ মামলাজটের মতো পরীক্ষাজটে ধুঁকছে। আশার কথা, অবশেষে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে করোনা শনাক্তের গড় হার ১০ শতাংশ আর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এ হার ৩০-৪৫ শতাংশ। করোনা শনাক্তের এ অবস্থায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শারীরিক উপস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাহলে করোনার অজুহাতে চলমান পরীক্ষাগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল না।
করোনা আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা করোনামুক্ত হলেও এর থেকে মুক্তি নেই সহজে। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর শুরু হয় ‘লং কোভিড’ নামক অসুখ। এর প্রভাব হয়তো সারাটা জীবন তাদের বয়ে বেড়াতে হবে শারীরিক ও মানসিক নানা ধরনের জটিল সমস্যা। শ্বাসতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, স্মৃতিশক্তি, মেধা, মনোজগৎ, ঘুমের স্বাভাবিকতা, পরিশ্রমের ক্ষমতা, প্রজননতন্ত্র, যৌনতাসহ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই লং কোভিড এখন বিজ্ঞানীদের মহাচিন্তিত করে তুলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কালো, সাদা ও হলুদ ছত্রাক আক্রান্তের ঝুঁকি। কারোনা আক্রান্ত হয়ে লাইফ-সাপোর্টে থাকা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেরে ওঠার পর শুরু হবে ‘লং কোভিড’-এর নানা জটিলতা। কিছু শিক্ষার্থী হয়তো আর কোনও দিন ক্লাসেই ফিরবেন না। নানা তথ্যে দেখা যাচ্ছে অনেকের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণেও হয়তো কারও কারও ফেরা হবে না। দীর্ঘদিন শিক্ষার সংস্পর্শে না থাকার কারণে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহে মারাত্মক ভাটা পড়েছে। প্রায় কর্মহীন দীর্ঘ অবসরে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। পাল্টে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। রাত জেগে গেমস খেলছে, মুভি দেখছে ও দিনের বেলায় ঘুমোচ্ছে। নামমাত্র অনলাইন ক্লাসে যোগদান করছে। এমনকি ক্লাসে যোগ দিয়ে গেমস খেলছে কিংবা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকছে। এছাড়াও মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ঘুম কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যায় ভুগছে তারা।
সম্প্রতি ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের মতো এত দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে মাত্র ১৩টি দেশে। এই ১৩টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আছে একমাত্র বাংলাদেশ। এসব দেশে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ১৬৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে বাংলাদেশেরই রয়েছে ৩৭ মিলিয়ন শিক্ষার্থী। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতের ক্ষতি সহজেই দৃশ্যমান। কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান নয়। ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে এর ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব। বিভিন্ন গবেষণায় শিক্ষায় ক্ষতির যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে তা গভীর উদ্বেগজনক। শিক্ষার জন্য তা ভয়ংকর অশনি সংকেত। টানেলের অপর প্রান্তে একটুখানি আলোর রেখার দেখা মিললেও সেই সঙ্গে শঙ্কাও রয়েছে।
আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে অনেক ‘যদি’ এবং ‘কিন্তু’ রয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে মত নেই কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির। শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হবে না। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে, সীমান্তবর্তী রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। ফলে ১৩ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
গত ১০ মে প্রকাশিত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ জরিপে দেখা যায়, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ৯৭ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চান। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত না খুললে রাজপথ অচল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কারও আন্দোলনের তোপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার চাইতে বন্ধ রাখতেই আমরা বেশি এসএমএস পাচ্ছি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সুরক্ষার জন্য বন্ধ রাখতে এসএমএস করে জানাচ্ছেন। কিছু মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আন্দোলনের কথা বলছে। অধিকাংশ মানুষ তার বিপরীতে কথা বলছেন। তাই আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। টিকা দেওয়া শেষ হলে করোনা পরিস্থিতি দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসে করোনার টিকাদান শুরু হলে গত ৪ মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকা দিতে আরও কয়েক মাস দরকার হবে। ১৫ মাস পরও তাই ভীষণ অনিশ্চয়তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাকে কেন্দ্র করে।
অনেকের প্রশ্ন, করোনা থেকে কবে আমরা মুক্ত হবো, তা বলা যাচ্ছে না। তাহলে কতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে? তাদের প্রশ্ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া ছাড়া অন্য সব কাজই করছে। শিক্ষার্থীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। শিক্ষার্থীদের পদচারণা বাজার, রেস্তোরাঁ, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, দলবেঁধে আড্ডা, দেশে-বিদেশে পর্যটন স্পটসহ সব জায়গায়। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রেই করোনার ভয় কেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সবকিছু খোলা। শিক্ষার্থীরাও ঘরে বসে নেই। তাহলে কোন যুক্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে?
আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকুক। প্রয়োজনে অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি ৭-১০ দিন পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। আর বিলম্ব নয়, কোনও কারণেই। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেই হবে না, দেড় বছরের ক্ষতি পোষানোর পরিকল্পনা নিতে হবে সেই সঙ্গে। শিক্ষাজীবন বিলম্বিত হওয়ায় কিছু দিনের জন্য হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। করোনা জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষার ওপরে যে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে, আমরা যেন সেই মৃত্যু পরোয়ানাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকরণে রূপ না দেই। শিক্ষার মৃত্যু মানে তো একটি জাতির মৃত্যু।
লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: [email protected]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।