জুমবাংলা ডেস্ক : বৃহস্পতিবার এলেই নওগাঁর ছিন্নমূল মানুষের চোখে-মুখে জুড়ে হাসির দেখা মেলে। যাদের তিনবেলা খাবার জোটে না দিনটিতে বিশেষ খাবার পেয়ে তারা বেজায় খুশি। দেখে মনে হবে কোনো আনন্দঘন অনুষ্ঠানে এসেছেন তারা। খাবারের জন্য নেই কোনো ব্যস্ততা। খাবার না পাওয়ার নেই কোনো অভিযোগ।
এক মুহূর্ত যেন নিজের বাড়িতে পেট ভরে খাবারের আয়েশ। টাকা ছাড়ায় এমন ভালো খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন অসহায়, দুঃস্থ, দিনমজুর আর ছিন্নমূল মানুষেরা। এভাবেই প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপ্যায়ন চলে। হোটেল মালিকের এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে।
নওগাঁ শহরের কোর্ট চত্বরের সামনে ’হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজ’। প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর হলেই শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষেরা বসে পরেন এই হোটেলে। টাকা ছাড়াই একবেলা তৃপ্তিসহ পেট পুরে খেতে। যে যখন আসছেন বসে পড়ছেন খাবারের সারিতে। খাবারের মধ্যে রয়েছে ডিম, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল ও সবজি।
খাবার খেতে আসা এক নারী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ভিক্ষা করে সংসার চালাই। আম’রা তিন বেলা খাবার পাই না। মাছ, মাংসতো বছরেও একবার কেনার সামর্থ নেই। আগে বছরে একবার কুর’বানির ঈদে মাংস খাইতাম। এখন নিয়মিত এ হোটেলে খেতে আসি। তাই বৃহস্পতিবার অন্য কোনো এলাকায় যাই না। শহরের আশেপাশের জায়গায় ভিক্ষা করে দুপুরে এসে কোনো দিন গোস্ত, আবার কোনো দিন মাছ দিয়ে পেট ভরে ভাত খাই।,
বয়সের ভারে নুয়ে পরা বৃদ্ধ আব্বাস আলী বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে বড় একা আর অসহায় হয়ে পড়েছি। এখন ভালমতো হাটতেই পারি না। আর ভালো খাবারের আশা করাতো দূরের কথা। সপ্তাহে একদিন এখানে আসি। একটু ভালো খাবারের আশায়। হাজী সাহেব আমাদের খাওয়ান। এর জন্য কোনো টাকা নেয় না। আল্লাহ্ উনার মতো ভাল মানুষকে জান্নাত দিক, এই দোয়াই করি।,
হোটেলের কর্মচারী সোহেল হোসেন বলেন, হাজী সাহেব অনেক ভালা মানুষ। তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিছেন, যেকোনো দিন যেকোনো সময় গরীব, অসহায় ও অর্থহীন মানুষ যদি খাইতে চান, তাহলে তাদেরকে আগে খাবার দেয়ার জন্য।
হোটেল মালিক আলহাজ্ব আলী আজগর হোসেন জানান, নিজের অতীত কষ্টের কথা ভেবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এমন উদ্যোগ। এতে ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য নেই। দুনিয়াতে আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন এমন কাজ করে যাবো।
নিজের অতীত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী একজন মানুষ। ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষের ধিক্কার, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ্য করে বড় হয়েছি। অভাবের সংসারে পরিবারেও ঠাঁই হয়নি আমার।
১৯৯৭ সালে বাবা-মার উপর রাগ করে স্বপরিবারে নওগাঁয় এসে ২৫ টাকা দিন মজুরিতে কাজ শুরু করি হোটেলে। আমার শারীরিক সমস্যা থাকায় হোটেল মালিক বেশি দিন রাখেনি। শেষে নিজের রক্ত বিক্রি করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি।
পরে আমার বাসার মালিকের সুপারিশে বর্তমান এই হোটেলে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ পাই। ঋণের কারণে কয়েক বছর পর মালিক হঠাৎ হোটেল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে আমি তাকে বুঝিয়ে সব ঋণ মাথায় নিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়েই হোটেলের ব্যবসা শুরু করি।
এরপর প্রতিদিন ২ কেজি, ৫ কেজি গরুর মাংস রান্না করে বিক্রি শুরু করি। এখন অনেক বেচাকেনা হয়। এখন আমার হোটেলে ৩৫ জন কর্মচারী কাজ করে। হজ্ব করার সৌভাগ্য হয়েছে। শহরে বাসা-বাড়ি করেছি। এখন দুই মেয়ে ও এক ছেলে পড়াশোনা করছে।
তিনি আরো জানান, গত এক যুগ ধরে গরীব মানুষদের টাকা ছাড়াই একবেলা খাবার দিয়ে আসছি। কারণ, আমি জানি অভাব কী’। ক্ষুধার জ্বালা কেমন। সপ্তাহের প্রত্যেক বৃহস্পতিবার দুঃস্থ, গরীব অসহায়দের খাওয়াই। তবে অন্যান্য দিনেও যদি কোনো ভিক্ষুক বা অসহায় লোকজন খেতে আসে, আমি তাদেরকেও খাওয়াই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।