জুমবাংলা ডেস্ক : কুরবানির ঈদ শেষে গ্রামে থেকে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ।বৃহস্পতিবা (২২ জুলাই) বিকালে লঞ্চযোগে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ রওনা দিলেও চালকদের গাফিলতির কারণে শুক্রবার ভোর ৬টার আগে সদরঘাট পৌঁছাতে পারেনি অনেক লঞ্চ। এর ফলে বাহনশূন্য সদরঘাটে বিড়ম্বনায় পড়েন হাজার হাজার লঞ্চযাত্রী।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে ঢাকাফেরা হাজার হাজার মানুষ সদরঘাটে সিএনজি বা বাস পাননি। গুটি কয়েক রিকশা থাকলেও তা যাত্রীর তুলনায় খুবই কম। ভোলাসহ বরিশালের ছয়টি জেলা থেকে বৃহস্পতিবার ছেড়ে আসা লঞ্চের যাত্রীরা সদরঘাটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কুরবানির মাংসের বস্তা। একে তো কোনো বাহন নেই তার সঙ্গে নিজের কাপড়-চোপড়ের ব্যাগ আর মাংসের বস্তা।
রাকিব চৌধুরী নামে এক যাত্রী বলেন, লকডাউন এতো কঠোর হবে বুঝতে পারিনি। আগেও তো লকডাউন দিয়েছে সরকার। তখন তো রিকশা চলত, এখন তাও নেই। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আগের দিন লঞ্চ ছাড়ায় আমরা উঠেছি। সকালে লঞ্চ ঘাটে এসেছে, আমাদের তো গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। লঞ্চ বন্ধ করলে তো আমরা উঠতাম না। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাব, ভাবতেই পারছি না।
ভোলার বোরহানউদ্দিন থেকে আসা পান্না বলেন, লঞ্চে থাকা ক্যান্টিনের ফ্রিজে কুরবানির মাংস রাখতে পারিনি। বাড়ি থেকেই মাংস বরফ করে নিয়ে এসেছি। লঞ্চ দেরিতে আসায় বরফ গলতে শুরু করেছে। তিনি অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও রিকশা পাননি বলেও জানান।ফলে হেঁটেই মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিকালে মোবাইলে তিনি জানান, সাড়ে ছয়শ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে তিনি চাঁদ উদ্যানে পৌঁছেছেন।
ঢাকা উদ্যানে জসিম উদ্দিনের চেম্বার রয়েছে। তিনি সেখানে দাঁতের নানা সমস্যা দেখেন। কুরবানির ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছেন। সর্বাত্মক লকডাউনের কথা জেনে অন্যদের মতো তিনি ঢাকায় ফেরেন। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে ১৬ কেজি মাংস নিয়ে এসেছি। ঢাকা উদ্যান যাব। কোনো বাহন পাইনি। তাই হেঁটেই রওনা হয়েছি। পরে তিনি মোবাইলে জানান, সাড়ে চারশ টাকায় বাবু বাজার থেকে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত রিকশায় পৌঁছেছেন।
কামরুল নামে এক যাত্রী জানান, তার মুখের চোয়ালে সমস্যা। তিনি ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় এসেছেন, মিরপুরে যাবেন। বাড়ি থেকে আত্মীয়ের জন্য ইলিশ মাছ আর কুরবানির মাংস দিয়েছে। কিন্তু সদরঘাটে কোনো রিস্কার বা সিএনজি না থাকায় হেঁটেই পল্টন মোড়ে আসেন। নিজের কাপড়-চোপড়ের ব্যাগের সঙ্গে মাংস ও মাছের ব্যাগ থাকায় অনেক কষ্ট করে হেঁটে এসেছেন। মাংসের বরফ গলতে থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনি হেঁটে এসেছেন। দুপুরে তিনি মোবাইলে জানান, কোনো এক আত্মীয়কে অনুরোধ করে গাড়ির ব্যবস্থা করে মিরপুর-১২ নম্বর পৌঁছান।
আসিফ নামে একজন জানান, ঈদ শেষে পরিবারের লোকজন নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন। সদরঘাটে কোনো বাহন না পেয়ে পরে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন।
এদিকে ভোর ৭টার দিকে গুলিস্তানের গোলাপশাহ পয়েন্টে ধস্তাধস্তি হয়। সেখানে কোনো বাহন না পাওয়া যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে কয়েকটি সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে হামলা চালায়। পরে পুলিশ বাধা দিলে মৃদু সংঘর্ষ হয়।
সকাল থেকেই সড়কে কড়াকড়ি অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভ্যান ও রিকশা ছাড়া অন্যকোনো ভাবেই ব্যক্তিগত গাড়ি যেতে দিচ্ছেন না। পিকআপ ভ্যানেও যাত্রী তুললেও তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কোলে ছোট শিশু নিয়ে হাঁটছেন এক যুবক। সঙ্গে রয়েছে তার স্ত্রী। বরিশাল থেকে এসেছেন। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই গাজীপুর যাব।তবে কীভাবে গাজীপুর যাবেন তা তার জানা নেই। এতো পথ তিনি হেঁটেই রওনা দেন। পরে তিনি কীভাবে পৌঁছেছেন তা আর জানা সম্ভব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।