জুমবাংলা ডেস্ক : গার্মেন্টকর্মী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে অপর গার্মেন্টকর্মী পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক পাপিয়ার ভাই সাইফুল মেনে নিতে পারেনি যে নাকি তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে শাম্মি নাম ধারণ করেছে। শাম্মিও চাইতো আরিফুল তার সঙ্গে প্রেমের মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুক। এই দ্বন্দ্বের জেরে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয় পাপিয়া যার লাশ অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে আড়াইহাজার থানা পুলিশ। গত বুধবার পিবিআই প্রেমিক আরিফকে গ্রেপ্তার করলে পাপিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আড়াইহাজারের শিমুলতলায় পাওয়া অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশের আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ছয় মাস পর গার্মেন্টকর্মী পাপিয়া বেগমের পরিচয় উদঘাটন করা হয়েছে। তিনি জানান, মূলত ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছে পাপিয়া। আর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল পাপিয়ার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম যে নাকি তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে শাম্মি নাম ধারণ করেছিল। গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) পাপিয়ার প্রেমিক আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হলে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়। মামলার বাকী আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পাপিয়ার সঙ্গে আরিফের প্রেমের কথা জানতে পারলে শাম্মির সঙ্গে ঝগড়া হয়। গত ২৭ মে প্রেমিক আরিফুল, পাপিয়া এবং তার ভাই সাইফুল পরে নামকরণ শাম্মি সবাই পাপিয়ার বাসায় ছিল। পাপিয়া ও শাম্মির ঝগড়ার কারণে আরিফুল বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বৃষ্টির কারণে যেতে না পারায় তার পরিচিত একই বিল্ডিং-এর ২য় তলায় জনৈক সামিয়ার বাড়িতে অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পরে পুনরায় আরিফুল পাপিয়ার ঘরে এসে পাপিয়ার লাশ ঘরের বিছানার ওপর দেখতে পায়।
এ সময় ভিকটিমের গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল এবং শাম্মি ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আরিফুল ঘরের ভেতরে চলে আসায় শাম্মি আরিফুলকে বলে যে, পাপিয়া বেঁচে আছে। পরে তারা একজন স্থানীয় ডাক্তারকে ডেকে এনে জানতে পারে পাপিয়া মারা গেছে। শাম্মির মাধ্যমে তার বাবা জয়নাল, পাপিয়ার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসেন। পরে পাপিয়ার বাবা জয়নালের পরিকল্পনামতে আসামি মো. আরিফুল ইসলাম, জয়নালের ছেলে মামুন এবং শাম্মি মিলে মৃত পাপিয়ার লাশ ভৈরব ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনামতে তারা সবাই মিলে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত পাপিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় তারা আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামকস্থানে রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভেতরে পাপিয়ার লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, শনিবার আসামি আরিফুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে বলেছেন, নিহত পাপিয়ার ভাই শাম্মি পাপিয়াকে হত্যা করেছেন। এছাড়াও পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত আসামি পাপিয়ার বাবা জয়নাল মিয়াকে দুদিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানায়, তার পরিকল্পনামতেই সে সহ তার সহযোগী আসামিরা পাপিয়ার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামক স্থানে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে গেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে আড়াইহাজারের শিমুলতলায় একজন অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় ২৯ মে একটি মামলা করে। প্রথমে মামলাটি পুলিশের কাছে তদন্তাধীন থাকার পর ২৩ জুলাই পিবিআই-এর কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।