জুমবাংলা ডেস্ক : ‘দলীয় লুটেরাদের সহযোগী’ হিসেবে কাজ করা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ব্যবস্থাকে সিভিল সার্ভিস বলা যাবে কি না—প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, সেই সার্ভিসটি একটি ভঙ্গুর সিভিল সার্ভিস, যেটি সিভিল সার্ভিস নামে অবহিত হতে পারে না। এটা জনসেবার সার্ভিস ছিল না। এর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ‘প্রশাসনিক সংস্কার ও উন্নয়ন: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যত ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা) আয়োজিত সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, জননিরাপত্তা বিভিাগের সচিব ড. আবদুল মোমেন। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ড. আনোয়ার উল্ল্যাহ।
সিরাজ বলেন, ‘আমরা সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসন সার্ভিসসহ সিভিল সার্ভিসকে কোন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই কথা মাথায় রাখতে হবে। এটা কি আদৌ কোনো সার্ভিস ছিল? এটাকে কি কোনো সার্ভিস বলা যেত? ওই সময়টা ছিল দলীয়করণকৃত লুটেরাদের সহযোগী, দেশের সমাজ, অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়নকরণে সহযোগীদের একটি সার্ভিস। ওই সময় কাজ করেছেন এমন অনেকে মন খারাপ করতে পারেন। তবে এটা সত্যি সেটা জনসেবার সার্ভিস ছিল না।’
‘এ রকম একটা সার্ভিস সাড়ে ১৫ বছর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সঙ্গে মিলে দেশটাকে লুণ্ঠিত করে, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিজর্সন দিয়ে, সুশাসনকে পুরোটা বিনষ্ট করে দিয়ে যে অবস্থায় নিপতিত করেছিল, সেই সার্ভিসটি একটি ভঙ্গুর সিভিল সার্ভিস, যেটি সিভিল সার্ভিস নামে অবহিত হতে পারে না,’ যোগ করেন তিনি।
মুখ্য সচিব বলেন, ‘এই রকম একটি সার্ভিসকে ৫ আগস্টের পর পেয়েছি। ৫ আগস্টকে ভুলে গেলে হবে না। কারণ এর আগে যারা চাকরিতে ছিলেন, মঞ্চে উঠে স্লোগান দিয়েছেন, তাদের কেউই বিশ্বাস করেননি যে জুলাই-আগস্টের মতো ঘটনা ছাত্রদের মাধ্যমে হওয়া সম্ভব। এখানে উপস্থিত অনেক সাবেক কর্মকর্তা স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে নানাভাবে কাজ করেছেন। সেই সাক্ষী আমি। ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকে ছিলেন। কিন্তু যারা কর্মরত ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, পরিবর্তনের জন্য কিছু করেছেন? দুএকজন হয়তো করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি এক মাসের বেশি সময় চাকরিতে আছি। যতটুকু বুঝতে পারছি, আমরা একটা বড় ভাবমূর্তি সংকটে আছি। প্রশাসন এবং পুলিশ এই দুই সার্ভিসকে আন্দোলনকারীরা কি খুব ভালো চোখে দেখেন? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, একটা মিশ্র অবস্থার মধ্যে আছি।’
এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, ‘ক্রান্তিকালের সুবিধা হলো এখান থেকে নতুন করে ভালো দিকে যাত্রার সুযোগ আছে। ক্রান্তিকালের বিপদ হলো, বর্তমান অবস্থা থেকে আরও খারপের দিকেও যেতে পারে। এখন সিদ্ধান্ত আমাদের সবার। দেখেন, আপনারা কী করতে চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে অন্যদের চেয়ে আলাদা, যোগ্যতা এবং দক্ষতায় যে অন্যদের চেয়ে বেশি, তারা দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়, তা সবার সামনে দৃশ্যমান করতে হবে। আমাদের ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, গত এক মাস দায়িত্ব পালনকালে আমাদের ক্যাডারের বন্ধু, সহকর্মী বা অনুজের কাছ থেকে আমাদের পেশাগত উন্নতির সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো কথা পাইনি। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, তাও তেমন সাড়া পাইনি। আমি বলছি না যে, ব্যক্তিগত বঞ্চনা-ক্ষোভের কথা বলবেন না, অবশ্যই বলবেন। কিন্তু আমি আশা করেছিলাম, সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রস্তাবও পাব, সেটা পাইনি। যাদেরকে আমি স্মার্ট, বুদ্ধিমান কর্মকর্তা হিসেবে সমীহ করি, তাদের কাছ থেকেও তেমন প্রস্তাব পাইনি।’
সরকার পরিচালনায় অদক্ষতাকে জনগণ সহজভাবে নেবে না : তারেক রহমান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।