প্রিয় দেশবাসী,
আমি আবরার ফাহাদ। গত তিন দিন হলো আমি আপনাদের কাছ থেকে চির বিদায় নিয়েছি। আমি দেশের সেরা বিদ্যাপিঠ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ লেখাপড়া শেষ করে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন দেশের জন্য করবো? সে দেশ যদি থাকে তবেই তো? যখন আমার দেশের স্বার্বভৌমত্ব বিক্রি হচ্ছে, যখন আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নতুন করে আমার স্বাধীনতার হুমকি হয়ে যাচ্ছে, যখন কালো শকুনের নজর পরেছে আমার মানচিত্রের ওপর, যখন আমার লাল সবুজের পতাকার রঙ ধুলোয় মলিন হতে চলছে, যখন আমার নদীর মিঠা পানি পাচার করে আমার দেশকে মরুভূমি করা হচ্ছে, যখন আমার সমূদ্র উপকূলে রাডার বসিয়ে ভীনদেশীদের সামরিক কলোনি বানানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যখন আমার দেশের ট্রানজিট দিয়ে আধিপত্যবাদের চারণভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে তখন ভবিষ্যতে আমার দেশ গড়ার স্বপ্নের কি মূল্য রয়েছে?
প্রিয় দেশবাসী!
আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে দেশ সেবা করতে আরো ৬/৭ বছর লাগতো। কিন্তু দেশবাসী বলুনতো? আজ থেকে ৬/৭ বছর পূর্বের বিশ্ব মানচিত্রের উন্নত রাষ্ট্র সিরিয়ার ঐতিহাসিক দামেস্ক বা আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া আমার মতোই কোন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আজ ৬/৭ বছর পর রাষ্ট্রহীন সিরিয়াতে কি মূল্য আছে? তাদের কোন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করাদের কি আপনারা সামান্য পিয়নের চাকরি দিবেন? দিবেন না! কারণ রাষ্ট্রহীন সার্টিফিকেটের কোন মূল্য পৃথিবীর কেউ দিবে না। শুধু সার্টিফিকেট কেন রাষ্ট্রহীন কোন মানুষকেও পৃথিবী এখন আর মানুষ মনে করে না।
আমি দেখছি ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে রাঙ্গানো জমিন তিলে তিলে আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদীর চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছে। ট্রানজিট, করিডর, রেলপথ, স্থলপথ, সমূহ বন্দরসহ সবই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমার দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব হারাচ্ছি। তখন আমার স্বপ্নের কি মূল্য আছে?
তাই আমিও আমার স্বপ্নের গতিপথ পরিবর্তন করেছি! অতীতের আমার পূর্বসুরীদের দেখানো পথেই দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব আর লাল সবুজের পতাকার জন্য আমার জীবন বিলিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমার রক্ত উৎসর্গ করেছি। আমার রক্ত উৎসর্গ করে আমার কোন কষ্ট নেই কিন্তু ব্যথিত হয়েছি, আমার রক্ত নিয়েছে আমার দেশেই বসবাস করা কতিপয় মীরজাফর আর লেন্দুপ দর্জিরা।
প্রিয় দেশবাসী
আমার রক্ত যেখানে প্রবাহিত করেছি সেই বুয়েটের পাশেই রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য সালাম রফিক ও বরকতের রক্তে লাল হয়েছিল জমিন! আমার রক্তের ফোটা যেখান থেকে প্রবাহিত হয়েছে সেখান থেকে উত্তাল মার্চের বঙ্গবন্ধুর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও দেড়শ’ মিটারের মধ্যে। আপনারাও আসুন, সমবেত হোন সেই স্থানে। দেশ রক্ষার নতুন করে শপথ নিন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ তৈরি করুন। আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদীদের জানিয়ে দিন, খবর দার, আমার দেশের স্বাধীনতার উপর কুদৃষ্টি দেয়া চলবে না। কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামের কবর থেকে আমি আবরার ফাহাদ বলছি।
লেখক : হাসান আল বান্না।
(লেখক : হাসান আল বান্না, শহীদ আবরার ফাহাদের চিঠির অনুলেখক, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।