জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের দশ জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ছয়জনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে মা-ছেলে, দাদা-নাতনি এবং একই পরিবারের তিন ভাই-বোনও রয়েছেন। নিচে দেখুন বিভিন্ন জেলায় মৃত্যুর সব খবর—
হবিগঞ্জ: বানিয়াচং উপজেলায় নৌকাডুবে দোলেনা আক্তার (২৫) নামে এক তরুণীর মৃত্য হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন তার ভাই ও ভাতিজা। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার রহমতপুর পাঁচকড়ি হাওরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দোলেনা আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের মেয়ে। নিখোঁজরা হলেন- নিহত দোলেনার ভাই আলী নূর (৩৮) ও আলী নূরের ছেলে খোকন (৭)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যাত্রীবাহী একটি নৌকা শিবপাশা থেকে শাহজালালপুর বাজারের দিকে যাচ্ছিল। নৌকা যাত্রী ছিল ১৩ জন। দুপুরে পাঁচকড়ি হাওরে পৌঁছালে নৌকাটি ডুবে যায়।
তিনি জানান, দোলেনা ও আলী নূর নিজ বাড়ি থেকে মুরাদপুর ইউনিয়নে তাদের নানাবাড়ি যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল ৭ বছরের শিশু খোকন। নৌকাডুবির পর দোলেনাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও খোঁজ মেলেনি বাকি দু’জনের। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।
লালমনিরহাট: জেলার রাজপুরে সতি নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে এক নব-দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিকেলে সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের জগতবেড় গ্রামের সতি নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এছাড়া ধরলা নদীতে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের লাশ পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন- রংপুর শহরের কামাল কাছনা এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম (২৫), তার নববধূ বৃষ্টি আক্তার (২০) এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ছবির উদ্দিনের ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুজন ইসলাম (১৩)।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম জানান, সদ্য বিবাহিত বৃষ্টি আক্তার তার স্বামী আনোয়ারুল ইসলামকে নিয়ে সোমবার (৩ আগস্ট) রাজপুরে জগতবেড় গ্রামে মামা ফারুক হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে মামার বাড়ির পাশে সতি নদীতে গোসল করতে যান তারা। আনোয়ারুল ইসলাম নদীতে নামলেও পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নববধূ বৃষ্টি আক্তার। একপর্যায়ে আনোয়ারুল পানিতে ডুবে গেলে চিৎকার দিয়ে স্বামীকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুবে যান বৃষ্টিও। স্থানীয়রা নিখোঁজ দম্পতির সন্ধানে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এবং লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল যৌথ অভিযানে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
ওসি আরো জানান, গত সোমবার বিকালে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে ধরলা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় স্কুল শিক্ষার্থী সুজন। পরে মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয়রা ধরলা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে পৃথক ঘটনায় মঙ্গলবার পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলো-তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের বড় দলুয়াগছ গ্রামের মো. মোমিনের ছেলে মো. নয়ন ও আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের কাটালি গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে সার্বির হোসেন (২)।
নয়নের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, বাড়িতে খুঁজে না পাওয়ায় এক পর্যায়ে পাশের পুকুরে পানিতে নয়নকে ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পলাশ চন্দ্র সাহা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
অন্যদিকে তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম জানান, সার্বিরকে বাড়ির পাশ্ববর্তী পুকুরে ভাসতে দেখে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
বগুড়া: আদমদীঘিতে ঈদের নিমন্ত্রণে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বিলের কছিমনের দরগা এলাকায় এ নৌকাডুবের ঘটনা ঘটে। এ সময় নৌকার অন্যান্য যাত্রীরা সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠে প্রাণে রক্ষা পায়। তারা হলেন- জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্দিরা গ্রামের শহীদ হোসেনের স্ত্রী চাঁদনী বেগম (৩০) ও তার ছেলে সাদ (৭)।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার সান্দিড়া গ্রামের প্রায় ২০ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নৌকা চড়ে বিল পাড়ের করজবাড়ী গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। নৌকাটি বিলের মাঝামাঝি স্থানে গেলে নৌকার পাটাতন (তলা) হঠাৎ ফেটে যায় এবং যাত্রীসহ বিলের পানিতে ডুবে যায়। এসময় অন্যান্য যাত্রীরা সাঁতার কেটে তীরে উঠলেও মা-ছেলে বিলের পানিতে ডুবে যায়। পরে অন্য একটি নৌকার সাহায্যে স্থানীয় লোকজন মা-ছেলেকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ: দৌলতপুর উপজেলার চরমাস্তল চরপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) নৌকাডুবির ঘটনায় তিন ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নিহতরা হলেন- হনুফা (৩৭) তার বোন রোকসানা (৩০) ও ভাই রিয়াজুল (২৫)।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন জানান, চরমাস্তল চরপাড়া বিলে ঝড়ের সময় দুপুর পৌনে ২টার দিকে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে নৌকার মাঝি হনুফার বোনের ছেলে মনির ও হনুফার স্বামী আব্দুল হক জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছে হনুফার মেয়ে মিথিলা (১২) ও রোকসানার ছেলে শান্ত (১১)।
তিনি আরো জানান, নিহতদের বাড়ি উপজেলার জিয়নপুর গ্রামের আবুডাঙ্গা গ্রামে। তারা চরমাস্তল চরপাড়া গ্রামে তাদের বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে ঝড়ে তাদের নৌকা ডুবে যায়। নৌকার মাঝি মনির হনুফার বোনের ছেলে। তারা মনিরদের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলো। দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসমত আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রাম: উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়াজী পাড়া গ্রামে মঙ্গলবার পুকুরের পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত নূরাইয়া খাতুন (৩) ওই এলাকার নুর আলমের মেয়ে।
গ্রাম পুলিশ কোবাদ আলী জানান, মঙ্গলবার দুপুরে নূরাইয়া খাতুন সবার অজান্তে ঘরের পাশে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। বাড়ির লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর বিকাল ৪টার দিকে পুকুর থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, এ নিয়ে জেলায় চলতি বন্যায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮ জনে।
শেরপুর: শ্রীবরদী উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলো- উপজেলার চাংপাড়া এলাকার মনির মিয়ার ছেলে মোসাফির (৬), নীলক্ষীয়া বাজারের আফাজ উদ্দিনের ছেলে সিয়াম (৭) ও একই এলাকার রাশেদ মিয়ার মেয়ে জান্নাত (৫)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে তিন শিশু খেলা করছিল। এ সময় হঠাৎ করে পাশেই থাকা পুকুরের পানিতে পড়ে যায় তারা। পরে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুকুর থেকে তাদের উদ্ধার করে। এরপর শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আমির হোসেন বলেন, তিন শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তারা সবাই পানিতে ডুবে মারা যায়।
শ্রীবরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রহুল আমিন তালকুদার বলেন, তিনজন শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠালে সেখানে গিয়ে একজনের মরদেহ পাওয়া যায়। বাকি দুইজনের মরদেহ আমাদের না বলে বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। যদিও ঘটনাটি বকসীগঞ্জ-শ্রীবরদী শেষ সীমানায়। পরে মৃত শিশুদের দাফন করা হয়।
জামালপুর: পৃথক ঘটনায় পানিতে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বকশীগঞ্জের ঝালোপাড়ায় পুকুরে ডুবে সিয়াম (৮) ও জান্নাত (৫) নামে দুই শিশু ও মাদারগঞ্জের ভেলামারীতে বন্যার পানিতে ডুবে তাসমিয়া আক্তার শাম্মি (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
বকশীগঞ্জের নীলক্ষিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঝালোপাড়ার আহাজুদ্দিনের ছেলে সিয়াম ও রাশেদ মিয়ার মেয়ে জান্নাত বাড়ির পাশে সালেহ আহমেদ ময়নার পুকুর পাড়ে খেলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে চিকিৎসকের ওপর হামলা করেছে নিহত দুই শিশুর পরিবার। এতে আহত হয় বকশীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাজিম শাহারিয়ারসহ অপর এক কর্মরত ডাক্তার, স্টাফ, নার্সসহ ৪ জন। বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রতাপ কুমার নন্দী জানান, হাসপাতালে এসে শিশুর স্বজনরা ডাক্তারদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ডাক্তারসহ ৪ জন আহত হয়। এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মাদারগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে তাসমিয়া আক্তার শাম্মি নামে আরো এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কড়ইচূড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, মঙ্গলবার সকালে ভেলামারী গ্রামের সানাউল্লাহর মেয়ে তাসমিয়া আক্তার শাম্মি বাড়ির পাশে ঝাড়কাটা নদীর বন্যার পানিতে খেলার সময় পানিতে ডুবে যায়। কিছুক্ষণ পর তার লাশ ভেসে উঠলে উদ্ধার করা হয়। মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সাভার: ঢাকার ধামরাই উপজেলায় নৌকা ডুবে দাদা-নাতনিসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের রৌহারটেক ও ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মালঞ্চ এলাকায় নৌকাডুবির এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরে ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের রৌহারটেক এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা ডুবে দুই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণে বেঁচে গেলেও নিখোঁজ রয়েছে এক স্কুলছাত্রী।
মৃতরা হলেন- সূয়াপুর ইউনিয়নে রৌহারটেক এলাকার সাবেক মেম্বার হিরা ফকিরের ভাগনি কলেজশিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার (২০) ও শারমিন আক্তার (২১)। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্রী পন্থি আক্তার (১৫)। নিখোঁজ ছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ধামরাই ও মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের রৌহারটেক গ্রামের হিরা ফকিরের বাড়িতে নেত্রকোনা থেকে বোন-ভাগনি ঈদের পরেরদিন বেড়াতে আসে। মঙ্গলবার দুপুরে নৌকায় করে বেড়াতে যায় চারজন। এ সময় বাতাসের কারণে নৌকা ডুবে যায়। এতে হিরা ফকিরের ভাগনি কলেজশিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার ও শারমিন আক্তার পানিতে ডুবে মারা যায়। তবে সাঁতার জানায় কাজলি বেগম (৩০) প্রাণে বেঁচে গেলেও দশম শ্রেণির ছাত্রী পন্থি আক্তার নিখোঁজ হয়।
সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোরহাব হোসেন বলেন, সাবেক মেম্বার হিরা ফকিরের দুই ভাগনি ও বোনসহ চারজন নৌকা করে বেড়াতে যায়। এ ঘটনায় দুইজন মারা গেছে এবং একজন নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, একই দিন দুপুরে উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মালঞ্চ এলাকায় নৌকা ডুবে মালঞ্চ গ্রামের মৃত রকমত আলীর ছেলে হাকিম আলী (৭০) ও তার নাতনি মুন্নীর (১১) মৃত্যু হয়। মুন্নী প্রবাসী জুলহাস আলীর মেয়ে এবং স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনায় জুলহাস আলীর স্ত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুরে জুলহাস আলীর অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়ে নৌকাযোগে বাসায় ফিরছিলেন হাকিম আলী। এ সময় নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। এতে হাকিম আলী, তার স্ত্রী ও নাতনি মুন্নী পানিতে ডুবে যান। পরে হাকিম আলী ও তার নাতনির মরদেহ উদ্ধার করা হলেও পুত্রবধূকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বদির উদ্দিন বলেন, তাদের মরদেহ উদ্ধার করে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধামরাই ফায়ার সার্ভিস অফিসের ওয়্যারহাউস কর্মকর্তা মো. আলম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই নৌকা ডুবে মারা যাওয়া চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা। তবে নিখোঁজ একজনকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের ডুবুরি দলের সদস্যরা।
সিলেট: পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে জুবায়ের (২২) নামে এক পর্যটক নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাও উপজেলার লাম কাইন এলাকার জজ মিয়ার ছেলে এবং স্থানীয় বায়তুল ফালাহ নামক একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বিকেলে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় গোসল করতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জুবায়ের তার ১৫ জন বন্ধু-বান্ধব মিলে ময়মনসিংহ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে জাফলংয়ে বেড়াতে আসেন। বিকেলের দিকে তারা জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় নদীতে গোসল করতে নামেন। এ সময় সাঁতার না জানায় স্রোতের টানে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন জুবায়ের। খবর পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, বিজিবি ও সিলেটের দমকল বাহিনীর ডুবুরি দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। কিন্তু জুবায়েরের কোনো সন্ধান পাননি তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোয়াইনঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আহাদ জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ, দমকল বাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে নিখোঁজ যুবকের সন্ধানে অভিযান চালানো হচ্ছে। সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত তাদের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
নেত্রকোনা: কেন্দুয়ায় ভগ্নিপতির বাড়িতে বেড়াতে এসে আত্মীয় স্বজনদের সাথে নৌকায় ঘুরতে গিয়ে বাতাসে উল্টে নৌকা ডুবিতে হাসিবা (১৮) নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বৌসন বিলে বাতাসে নৌকা উল্টে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত তরুণী ঢাকার ডেমরা থানার সারুলিয়া গ্রামের মো. কবির উদ্দিনের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঈদের দিন ঢাকা থেকে বাবা মায়ের সাথে হাসিবা তার ভগ্নিপতি খোকন মিয়ার বাড়িতে কেন্দুয়ার দুর্গাপুর গ্রামে বেড়াতে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে বৌসন বিলে তারা কয়েকজন মিলে নৌকায় করে ঘুরতে বের হয়। এসময় বিলের মাঝামাঝি পৌছতেই বাতাসে নৌকা উল্টিয়ে ফেললে সকলেই পানিতে পড়ে যায়। অন্যরা সাঁতরে তীরে ভিরলেও হাসিবা পানিতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে কেন্দুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লাশের সুরত হাল রিপোর্ট করা হয়েছে। বাবা মায়ের সাথে বেড়াতে এসে দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে পরিবারের মাঝে শোক নেমে এসেছে। তারা লাশের দাফন কেন্দুয়াতেই করে ফেলবে বলে পরিবার থেকে জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।