সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণে জাতীয় বেতন কমিশন গঠন হয়েছে এক দশক পর। সার্বিক বেতন কাঠামো নির্ধারণের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য কমিয়ে আনার চিন্তা করছে কমিশন।
বর্তমানে সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকুরীজীবী, সরকারি প্রতিষ্ঠান (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ) কিংবা বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতি বেতন কাঠামো কেমন চায়, সে বিষয়ে উন্মুক্ত মতামত নিচ্ছে কমিশন। এক্ষেত্রেও গ্রেড পুনর্বিন্যাস করার বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কমিশনের প্রশ্ন-৫ এ মতামত চেয়ে বলা হয়েছে, আপনি কি ২০ গ্রেড বেতন কাঠামোর পক্ষে? এরপরেই প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনার পছন্দের গ্রেড সংখ্যা কত? অপর প্রশ্নে পছন্দের গ্রেড সংখ্যার যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে কমিশন।
একইভাবে অন্য আরেকটি ক্যাটাগারিতে এমন প্রশ্নই করা হয়েছে একটু ঘুরিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? বিদ্যমান বেতন কাঠামোয় কি ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পে কমিশনের এক সদস্য জানান, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কমিশন। সেজন্য বিদ্যমান ২০টি গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে মোট গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে। চার ক্যাটাগরিতে মতামত নেওয়ার পর কমিশন বিভিন্ন কমিটি/সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। এর পর যাচাই-বাছাই করে গ্রেড পুনর্বিন্যাসের সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে ১-১০তম গ্রেডের মধ্যে দুটিকে একত্রীকরণ এবং ১১-২০তম গ্রেড ভেঙে ৫-৬টি গ্রেডে পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।
পে স্কেল-২০১৫ ঘেঁটে দেখা গেছে, চলমান বেতন স্কেলে ৮ম (২২ হাজার) এবং নবম গ্রেডে (২৩ হাজার) বেতনের ব্যবধান মাত্র ১০০০ হাজার। একইভাবে ২০তম ও ১৯তম গ্রেডের মধ্যে বেতনের ব্যবধান মাত্র ২৫০টাকা। আর ১৭তম (৯০০০) ও ১৮তম গ্রেডের (৮৮০০) মধ্যে মূল বেতনে ক্ষেত্রে ২০০টাকা এবং এবং ১২তম ও ১৩তম গ্রেডের ব্যবধান মাত্র ৩০০টাকা। কম ব্যবধান থাকা এসব গ্রেডগুলোকেই ভেঙে সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় কিনা- এমন আলোচনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিশনে।
সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কমিশন। সেজন্য বিদ্যমান ২০টি গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে মোট গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে। মতামত নেওয়ার পর পর যাচাই-বাছাই করে গ্রেড পুনর্বিন্যাসের সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমাতে দেশের বিদ্যমান গ্রেড পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। কারণ যে হারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তাতে বেতনের ব্যবধান না কমালে নিচের গ্রেডগুলোতে চাকরি করা কর্মজীবীদের জন্য বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষও রয়েছে।
এক্ষেত্রে কমিশন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো গ্রেড পুনর্বিন্যাস করতে পারে। দেশটিতে সরকারি চাকুরীজীবীদের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। গ্রুপ-সি, গ্রুপ-বি এবং গ্রুপ-এ এর মাধ্যমে মোট ১৮টি লেভেলের স্কেল ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে লেভেল-১ কে সর্বনিম্ন এবং লেভেল-১৮ কে সর্বোচ্চ ধরা হয়।
গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে কমানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে কমানোর বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। আগে আমরা কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পেতাম, কিন্তু ২০১৫ সালের পে স্কেলে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমারা টাইম স্কেল পেতাম, সেটা বাদ দিয়ে উচ্চতর স্কেল দিয়েছে। এতে কর্মচারীদের বহু ক্ষতি হয়েছে।
পে কমিশনে গ্রেড ভেঙে ১৫/১৬ টা করার দাবি জানাবে সংগঠনটি। তবে তাদের মূল শর্ত থাকবে, আগের থাকা সুবিধাগুলো পুনর্বহাল। ওইসব সুবিধা দেয়া ছাড়া গ্রেড কমানো হলে কর্মচারীরা তা মানবেন না বলেও জানান এই নেতা।
একই সুরে কথা বললেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বদিউল কবিরও। তিনি বলেন, ‘৭ম পে কমিশনে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড ছিল কিন্তু অষ্টম বেতন কমিশনে এসে এটা বাদ দেওয়া হয়েছে, আমাদের তো নির্ধারিত সময় পর পদোন্নতি হয় না। অফিসাররা নির্ধারিত সময় পদোন্নতি পায়, পদ না থাকলে তাদের পদোন্নতি দেয়। কিন্তু আমাদের পদ শূন্য না হলে পদোন্নতি দেয় না। সে কারণে আমাদের টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড অবশ্যই থাকতে হবে।’
তবে তিনি ২০টা গ্রেড ভেঙে ১২ টা করার পক্ষে। এক্ষেত্রে ১-৯ম ঠিক রেখে এবং ১০-১২তম , ১৩-১৬তম ও ১৭-২০তম একত্রিত করে তিনটি গ্রেড করার প্রস্তাব কমিশনে জমা দেবেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।