জুমবাংলা ডেস্ক : দুই নার্স ও এক ওয়ার্ড বয়কে ছুরিকাঘাত করা করোনা রোগী সবুজ পিরিস (৩৫) মারা গেছেন। সোমবার (২৬ জুলাই) রাতে রাজধানীর গুলশানে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ জানিয়েছে, সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার শিন শিন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বুধবার (২৮ জুলাই) রাতে হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবুজকে মারপিটের কথা অস্বীকার করেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) মধ্য রাতে তিনি উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের শিন শিন জাপান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে সেই হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মিতু রেখা, ইমোনা আফরোজা ও ওয়ার্ড বয় মো. সাগরকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেছিলেন। তাদের মধ্যে মিতু রেখা ও ইমোনা ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) বিকেলে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন গাজী সংবাদমাধ্যমে জানান, উত্তরার শিন-শিন জাপান হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী মো. সবুজ (২৪) রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ করেই ছুরি নিয়ে কর্তব্যরত নার্স মিতু রেখা ও ইমোনা আফরোজাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় কর্তব্যরত ওয়ার্ড বয় সাগর তাদের বাঁচাতে গেলে সাগরকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। আহত তিনজনই শিন-শিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে করোনা রোগী সবুজের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। তাকে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। হামলার কারণ জানা যায়নি।
সবুজের শ্বশুর জ্যোতি কস্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সেই রাতে শিন শিন হাসপাতালে কী হয়েছিল, তা আমাদের জানা নেই। তারা যা বলেছে, আমরা তা–ই শুনেছি। খবর পেয়ে পরদিন ২৩ জুলাই সকালে গিয়ে দেখি, সবুজকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বাইরে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। তার পুরো শরীর ফুলে গিয়েছিল, বিভিন্ন স্থানে ছিল কালো দাগ। অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এতে তার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অস্ত্রোপচার করা হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। অসুস্থ সবুজকে মারধর করে জখম ও চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়েছে।’
স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, শিন শিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে সবুজকে ৮০ হাজার ৮০০ টাকা দামের একটি ইনজেকশন দেওয়া হত। এতে তিনি উন্মাদের মতো আচরণ করতেন। এর জেরে তিনি হাসপাতালের কর্মচারীদের ছুরিকাঘাত করে থাকতে পারেন।
তারা বলেন, ৫ দিনে সবুজের চিকিৎসায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু সবুজের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। উল্টো তারা সবুজকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসীন গাজী বলেন, নার্স ও ওয়ার্ড বয়ের ওপর হামলার ঘটনায় সবুজের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছিল। এখন সবুজের পরিবারের পক্ষ থেকে করা হত্যা মামলায় শিন শিন হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে হাসপাতালের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।
শিন শিন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, সবুজ যখন তিনজনকে ছুরিকাঘাত করেন, তখন অন্য রোগী, স্বজন ও হাসপাতালের কর্মচারীরা তাকে আটকাতে যান। ধস্তাধস্তির সময় ১২০ কেজি ওজনের অক্সিজেন সিলিন্ডার তার শরীরের ওপর পড়েছিল। এতে তার হাতে আঘাতও লাগে। তবে এই হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় সবুজ হেঁটে বের হয়েছিলেন। করোনায় বা অন্য হাসপাতালে গিয়ে মারা গেলে, সেই দায় শিন শিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।