জুমবাংলা ডেস্ক : করোনা পরিস্থিতিতে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে বেড়েছে ভিনদেশি মানসিক ভারসাম্যহীনদের আনাগোনা। জেলার পথ ঘাট হাট বাজারে অচেনা মানসিক ভারসাম্যহীনদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে এসব পাগলেরা। এদের নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশ আতঙ্কিত। স্থানীয়দের অভিযোগ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সুযোগ বুঝে এসব পাগলদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে দিচ্ছে। সীমান্ত এলাকার কোথাও কোথাও পুশ ইন ঠেকাতে বিজিবির সাথে রাত জেগে পাহারা দিতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে চলছে প্রশাসন ঘোষিত লকডাউন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিনদেশি মানসিক ভারসাম্যহীনদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে অপরিচিত এসব পাগলের সংখ্যা। সীমান্ত এলাকার হাট বাজার ও পথ ঘাটে হরহামেশাই দেখা মিলছে তাদের। জরাজীর্ণ ময়লা কাপড় আর ভয়ঙ্কর চেহেরার এসব পাগলেরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে সেখানে। থাকছে রাস্তা ঘাট,দোকানের বারান্দা, বা পুরোনে পরিত্যক্ত ঘরগুলোতে।
শতাধিক মানসিক ভারসাম্যহীন দিনে রাতে ছুটে বেড়াচ্ছে। তাদের কথাবার্তা ও আচার আচরণ দেখে মনে করা হচ্ছে এসব পাগলের অধিকাংশই প্রতিবেশি দেশ ভারতের অধিবাসী। পঞ্চগড়ের তিন দিকে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ২৮৮ কিলোমিটার।
স্থানীয়দের অভিযোগ সীমান্ত দিয়ে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে তাদের ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, শিংরোড ও বড়শশী সীমান্তে বিএসএফ পুশ ইনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বলেও জানান তারা। পুশ ইন ঠেকাতে সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবির সাথে সাথে স্থানীয়দের রাত জেগে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
গত ২২ এপ্রিল বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কচুবাড়ি এলাকায় মহানন্দা নদীর মাঝখানে দীর্ঘ সময় ভারতীয় একজন নাগরিককে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। স্থানীয় লোকটির বেশভুষা দেখে মনে করছেন লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। পরে বিজিবির কড়া পাহারায় সে আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে তার দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশে ভিনদেশি এসব মানসিক ভারসাম্যহীনদের আনাগোনা নিয়ে স্থানীয়রা বেশ শঙ্কিত। তারা ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় করোনা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে বিজিবির নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংরোড সীমান্ত এলাকার ফারুক আহমেদ বলেন, মাঝে মাঝেই শোনা যায় বিএসএফ পাগল পুশ ইন করবে। এমন খবর শুনলেই আমরা বিজিবির সাথে পুশ ইন ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দেই। যেন কোনভাবেই তারা পুশ ইন করতে না পারে।
তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা খন্দকার আরিফ হোসেন লিপটন বলেন, নতুন নতুন অনেক পাগল দেখা যাচ্ছে। যাদের আগে দেখা যায় নি। বিএসএফ সুযোগ বুঝে পাগলদের বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
তেঁতুলিয়া টিম ১৯ যোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন রকি বলেন, করোনা সংকটের শুরু থেকেই আমরা পথে পথে ঘুরা মানসিক ভারসাম্যহীনদের দুবেলা খাবার দিয়ে যাচ্ছি। তারা যেন ছুটোছুটি না করে সেজন্য নির্ধারিত স্থানে খাবার দিচ্ছি। তবে অনেক মানসিক ভারসাম্যহীনদের কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে এরা ভারতের নাগরিক।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের সকলের ধারণা এই পাগলগুলো প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা। কিছুদিন আগেও মহানন্দা নদী দিয়ে একজন পাগলকে তারা বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করে। পরে বিজিবি সেটি প্রতিহত করে। আমার মনে হয় উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে এর একটা সমাধান করা দরকার। বিএসএফ যেন কোনভাবেই পাগলদের পুশ ইন করতে না পারে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, এমনিতেই আমরা করোনা আতঙ্কে রয়েছি। তার মধ্যে বিএসএফ ভারতীয়দের বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমরা বিজিবি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। আমরা অনুরোধ জানিয়েছি কোনোভাবেই যেন ভারতীয় পাগল বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ফেরা মানসিক ভারসাম্যহীনদের আমরা খাবার ব্যবস্থা করেছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কাশেম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানসিক ভারসাম্যহীনদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা আমরা নিশ্চিত নই। তাই তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, সীমান্ত দিয়ে পুশ ইনের কোনো সুযোগ নেই। করোনা পরিস্থিতিতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিছুদিন আগে কয়েকজন তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল কিন্তু বিজিবির সতর্ক পাহারার কারণে তারা প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়া পঞ্চগড়ে যে সকল মানসিক ভারসাম্যহীন রয়েছেন আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি তারা বাংলাদেশেরই।
পঞ্চগড়-২ আসনের সাংসদ রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ভিনদেশি পাগলের আনাগোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজিবির প্রতি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার আহ্বান জানান।
এদিকে জেলার ভেতরে কয়েকশ মানসিক ভারসাম্যহীন লকডাউনের মধ্যে চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন। হোটেল রেস্তোরাঁ খোলা না থাকায় অভুক্ত অবস্থায় কাটছে তাদের দিন। এই পরিস্থিতিতে অসহায় এসব মানসিক ভারসাম্যহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে তেঁতুলিয়ার টিম ১৯ যোদ্ধাসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণরা। প্রতিদিন তারা তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন।সূত্র : কালের কন্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।