জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্যা করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকার অদম্য প্রত্যয়ে একের পর এক মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করেছেন এক বিশেষ মানবিক উদ্যোগ ‘ঈদ আনন্দ ২০২০’।
তিনি বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ব্যক্তিগত এই মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ১০০টি দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারকে প্রয়োজনীয় ঈদের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। লোহাগাড়া সিটিজেন পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দুস্থ ও অসহায় পরিবারের সদস্যদে এই খাদ্য উপহার দেয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানেও বিশেষত্ব পরিলক্ষিত হয়। টেবিলে টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয় সেমাই, চিনি, গুড়া দুধ, সয়াবিন তেল, নুডলস ও চাল। যেন সাজানো পরিপাটি ঈদ বাজার। দুঃস্থ ও অসহায় লোকজন সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাত ধুয়ে, মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে উক্ত সাজানো খাদ্যসামগ্রী থেকে নিজ হাতে তুলে নেন নিজেদের প্রয়োজনীয় খাবার। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও দৃষ্টিনন্দনভাবে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। লোহাগাড়া থানা পুলিশের সদস্যরা উক্ত কার্যক্রমে তাকে সহায়তা করেন।
করোনার এই দুঃসময়ে এবার ভিন্নভাবে উৎযাপিত হবে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর। প্রায় দুই মাস যাবত চলমান লকডাউন ও বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের ঘরে আনন্দের পরিবর্তে অভাবের ঘনঘটা। সবখানে অনিশ্চয়তা। মধ্যবিত্ত ও ছোট ব্যবসায়ীরা আছেন নিরব কষ্টে। না পারছেন হাত পাততে, না পারছেন নিজেদের খাদ্য নিজেরা জোগাড় করতে। উভয় সংকটে পরেছেন তারা। ইতোপূর্বে সাহায্য গ্রহণে অনভ্যস্ত এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে আসন্ন ঈদের আনন্দ নেই।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রভাবে অনেক প্রবাসী ভাই-বোন কাজ হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছেন। প্রবাসী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় দেশে তাদের পরিবারের লোকজন বিপদে আছেন। সাতকানিয়া সার্কেল এর এই পুলিশ কর্মকর্তা করোনা দুর্যোগের শুরু থেকে এসব দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এসএমএস ও ফোন কলের ভিত্তিতে তিনি ইতিপূর্বে সাহায্যপ্রার্থী প্রবাসীদের পরিবারের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী নিজে পৌঁছে দিয়েছেন।
তার এই উদ্যোগ সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানা এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। প্রবাসীরা তার এই কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে নিরবে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী খুঁজে খুঁজে দিচ্ছেন খাদ্য সহায়তা। জনমনে পুলিশকে করেছেন প্রথম আশ্রয়স্থল। তার গাড়ি দেখলে ছুটে আসছেন অসহায় মানুষজন। তিনিও সাধ্যমত তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সবার কাছে এ এক নতুন পুলিশ। মানবিক পুলিশ।
এসব কার্যক্রম বিষয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্যা বলেন, করোনা আমাদের জীবন ও জীবিকার উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই সময় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্ত পরিবার খাদ্য কষ্টসহ আর্থিক অনটনে পড়েছেন। শুরুতে সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে আমিসহ বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য এসব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে অনেকেই আমাকে ফোন করে এবং মেসেজ দিয়ে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা চান। এই উদ্ভূত চাহিদার প্রেক্ষিতে আমি বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে এসএমএসের ভিত্তিতে প্রবাসীদের পরিবারের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। মধ্যবিত্ত পরিবার এর পাশে থেকেছি। আসন্ন ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ১০০ জন নিম্ন আয়ের, হতদরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে খাদ্য উপহার দিয়েছি শুক্রবার। আশা করছি এই ১০০টি পরিবার ঈদের দিন এই খাদ্য সামগ্রী দিয়ে পেট ভরে খেতে পারবে। দুঃখের মধ্যেও তারা কিছুটা আনন্দ পাবে। তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিত হবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।