জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বাচ্চা জন্ম দিয়েছে নীলগাই। তাও একটি নয়, দুটি। নীলগাইয়ের বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ঘটনাকে দারুণ সুখবর হিসেবে দেখছেন পার্কটির কর্মকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, নীলগাই বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানিয়েছেন, পার্কে থাকা একমাত্র মাদি নীলগাইটি গত ১ আগস্ট দুটি বাচ্চার জন্ম দেয়। বাচ্চা দুটির বয়স ৪৮ দিন। এদের গায়ের রং বাদামি। দুই বাচ্চাসহ মা নীলগাই সুস্থ রয়েছে। বাচ্চা দুটির নিরাপত্তা বিবেচনা করে এত দিন এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।
সাফারি পার্কের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, একসময় উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকায় নীলগাইয়ের বিচরণ ছিল। শেষবার ১৯৪০ সালে একটি নীলগাই দেখা গিয়েছিল পঞ্চগড়ে। এরপর দীর্ঘ ৮১ বছরে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে আর কোথাও প্রাণীটিকে দেখা যায়নি।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা একটি নীলগাই জবাইয়ের প্রস্তুতি নেয়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা এটিকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। এই স্ত্রী নীলগাইটিকে পরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় একটি পুরুষ নীলগাই। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকেও ধরে জবাইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি এ নীলগাইটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রজননের জন্য গত বছরের ১৯ আগস্ট গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। এর পর থেকে এ সাফারি পার্কেই রয়েছে এ জুটি।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান জানান, নীলগাই দুটি ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে বলে তাঁদের ধারণা। কারণ বাংলাদেশে প্রাণীটি বিলুপ্ত হলেও ভারতে প্রায় এক লাখ নীলগাই রয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতিতেও নীলগাইয়ের দেখা মেলে।
পার্কের কর্মকর্তারা জানান, সাফারি পার্কে সঙ্গী পেয়ে স্ত্রী নীলগাইটির মধ্যে ভিন্ন আচরণ দেখেন তাঁরা। শুরু থেকেই এ নীলগাই জুটির মধ্যে বেশ সখ্য দেখা গেছে। এতে তাঁরা নীলগাইয়ের বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা খুঁজে পান।
আজ শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ঘন বনের ভেতর বাচ্চাদের নিয়ে অবস্থান করছে মা নীলগাই। কাছেই রয়েছে বাবা নীলগাইটিও। বনের ভেতর বারবারই স্থান পরিবর্তন করছিল নীলগাই পরিবারটি। প্রথমে বাবা নীলগাই সম্ভাব্য নিরাপদ স্থানটি একবার ঘুরে আসছে, এরপর বাবা নীলগাইকে অনুসরণ করে ওই স্থানে যাচ্ছে দুই বাচ্চাসহ মা নীলগাই। অবশ্য বনের ভেতর অবস্থান করায় এদের দেখা পাওয়া বেশ মুশকিল ছিল।
এদিকে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গত ২৪ ঘণ্টার জন্য এদের অবস্থান ক্যামেরা ট্রাপিং (স্বয়ংক্রিয় ছবি তোলার ব্যবস্থা) করেন। এতে তিনি এ প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে নতুন ধারণা পান। তিনি জানান, ক্যামেরায় দেখা গেছে এরা রাতেও ঘুরে ঘুরে খাবার খাচ্ছিল। একই সঙ্গে বাচ্চা দুটিও মা-বাবাও সঙ্গে ঘুরে ঘুরে খাবার খেতে দেখা যায়।
সাফারি পার্ক কর্মকর্তারা জানায়, পুরুষ নীলগাইয়ের রং গাঢ় ধূসর। অনেকটা কালচে রঙের। পুরুষ নীলগাইয়ের উচ্চতা ৫২ থেকে ৫৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এদের শিং-এর দৈর্ঘ্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। মাদি নীলগাইয়ের রং লালচে বাদামি। হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর দিকে এরা মিলিত হয়। এদের গর্ভধারণকাল ২৪৩ দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জোড়া বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে এরা। জন্মের ৪০ মিনিট পরেই দাঁড়াতে পারে বাচ্চা। মর্দা নীলগাই তিন বছর আর মাদি নীলগাই দুই বছরের মধ্যেই প্রজননে সক্ষম হয়। নীলগাইয়ের গড় আয়ু সাধারণত ২১ বছর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।