জুমবাংলা ডেস্ক : বন্ধুদের সন্ধান না পেয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আবার অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেলেন বন্ধুদের খোঁজে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া ৮০ বছরের আব্দুল মজিদ। তবে কিছু দিন পরে আবারও দেশে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টায় বিদেশি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করেন প্রবাসী আব্দুল মজিদ।
দেশত্যাগের আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন, আরও কয়েকদিন পরে তার অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ জরুরি একটা কাজের জন্য শুক্রবার রাতেই তাকে চলে যেতে হলো।
ওইসময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের কেউ এখনো ফোন করেনি। তবে আমার বিশ্বাস কারও না কারও সঙ্গে দেখা হবেই। তাই অস্ট্রেলিয়ায় কাজ শেষে করে সপ্তাহ দুয়েক পর আবারও দেশে আসবো বন্ধুদের খোঁজে।’
আব্দুল মজিদ অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করলে বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরগুলো দিয়ে দেবেন। ওই নম্বরগুলো আমার ভাইয়ের ছেলের। তার সঙ্গে কথা বললে সে আমার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেবে।’
আব্দুল মজিদের ভাইয়ের ছেলে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার চাচা ভালো মনের একজন মানুষ। সহজ-সরল লোক। তা নাহলে এ বয়সে শুধু বন্ধুদের খোঁজে বিদেশ থেকে এসে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘুরে বেড়ায়? টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়? এসব করতে আমরা বারণ করেছিলাম, কিন্তু তিনি শোনেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাচাকে সবাই আমরা সম্মান করি। আমরা বলেছি, আপনার বন্ধুদের কারও বয়স ৮৫ বছর, কারও ৮০-এর বেশি। তারা এখন বেঁচে নাও থাকতে পারেন। এসব শুনে চাচা মন খারাপ করতেন। তিনি আমাদের পরিবারের মুরুব্বি। তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলতাম না।’
সালাউদ্দিন বলেন, ‘চাচা বরিশাল থেকে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় আসেন। রাত ১০টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।’
পরিবার সূত্র জানায়, সম্প্রতি বন্ধুদের সন্ধানে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসেন ৮০ বছর বয়সী আব্দুল মজিদ। দীর্ঘদিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা বন্ধুদের সঙ্গে একবার দেখা করাই যেন এখন তার জীবনের শেষ ইচ্ছা। তাই এ বয়সেও দেশের মাটিতে পা রেখেই বন্ধুদের হন্যে হয়ে খোঁজেন। বন্ধুদের সন্ধানে একাধিক জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি। ৮০ বছরের এ বৃদ্ধের এমন বন্ধুপ্রেমে অবাক তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আব্দুল মজিদ বরিশাল নগরীর বাংলা বাজার নিউ হাউজ লেন এলাকার বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। চাকরির সুবাদে আশির দশকে লিবিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে ১০ বছরের মতো কাটান। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তার বেশ কয়েক বাংলাদেশি বন্ধু হয়।
৯০ দশকে মজিদ অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন বন্ধুদের সঙ্গে। টানা তিন দশক পরে সেসব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশে আসেন মজিদ। অনুসন্ধান চালিয়েও বন্ধুদের খোঁজ না পেয়ে দিয়েছেন পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও।
জানা গেছে, চাকরিজীবনের শুরুতে প্রথমে খুলনা, এরপর বরিশাল, তারপর আবার খুলনায় কাজ করেন আব্দুল মজিদ। সেখান থেকে লিবিয়ায় ৯-১০ বছর কাজ করেন। সেই সময় পাবনার হান্নান, আলাউদ্দিন, টাঙ্গাইলের রেহেনা, সুচরিতা, রাজশাহীর আব্বাস, নোয়াখালীর মনির, কুমিল্লার নুরুল ইসলামের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার।
আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বন্ধুদের কথা আমার প্রায়ই মনে হয়। এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে আমি খুব সন্তুষ্ট অনুভব করতাম। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারলে হয়তো আমার এ জীবনটা আরও ভালো কাটতো।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।