জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর চড়াও হয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। অর্ভ্যথনা না জানানো এবং আসন সংরক্ষিত না রাখার অভিযোগ এনে ওই সাংসদ ইউএনওকে সভায় ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে এই সংসদ সদস্য তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের দিকে তেড়ে যান সাংসদ নদভী। এসময় উত্তেজনা ছড়িয়ে সভা পণ্ড হওয়ার উপক্রম হলে আরেক সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। জনপ্রতিনিধির এমন আচরণে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যের বিরোধী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি পড়েছে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে। ওই আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। বাকি ছয়টি আসন পড়েছে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনে। ওই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সাতকানিয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে দুই সাংসদই মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে আছেন।
সভায় উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা ইউএনও নুর এ আলমের সভাপতিত্বে শুরু হয়। সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী শুরু থেকে সভায় থাকলেও নদভী আসেন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। তখন সভা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংসদ সদস্য নদভী ভেতরে ঢুকে দেখেন সভাপতির পাশে তার জন্য সংরক্ষিত চেয়ার খালি নেই। তিনি কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর চেয়ার খালি করে তাকে বসানো হয়। বসেই তিনি ইউএনও’র ওপর চড়াও হন। উচ্চস্বরে ইউএনও’র কাছে তাকে কেন সভাস্থলের বাইরে গিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়নি এবং তার চেয়ারে অন্য সদস্য কেন বসেছেন, সেটা নিয়ে কৈফিয়ত তলব করেন। একপর্যায়ে সাংসদ রেগে গেলে ইউএনও প্রকাশ্যে মাইকে ক্ষমা চান।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সাংসদ এসময় ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের পাশাপাশি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলির হুমকি দেন।
কিন্তু সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুল মোতালেব এমপি নদভীর এমন আচরণের প্রতিবাদ করেন। তিনি নদভীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না। একটি চলমান সভায় ঢুকে এমন আচরণ আপনি করতে পারেন না। আপনি যদি সময়মতো আসতেন, তাহলে চেয়ার কিংবা আপনাকে অভ্যর্থনা জানানো নিয়ে এমন ব্যত্যয় হতো না।’
এসময় সাংসদ নদভী দাঁড়িয়ে যান। উপজেলা চেয়ারম্যানও দাঁড়িয়ে যান। দু’জনের মধ্যে বাদানুবাদের একপর্যায়ে সভায় ব্যাপক হট্টগোল তৈরি হয়। সংসদ সদস্যের বিরোধী কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। উপজেলা চেয়ারম্যানও বেরিয়ে যাবার উপক্রম হলে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী তাকে শান্ত করেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের আবার সভাস্থলে নিয়ে আসেন। এরপর আরও প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো সভা চলে এবং সংসদ সদস্য নদভী বক্তব্য রাখেন বলে সভায় উপস্থিত সদস্যরা জানান।
জানতে চাইলে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী বলেন, ‘নতুন ইউএনও, জয়েন করেছেন মাত্র সপ্তাহখানেক আগে। এমপি উপজেলা পরিষদে গেলে আগের সব ইউএনও বাইরে বের হয়ে সম্মান জানাতেন। এই ইউএনও সম্মান তো জানাননি, আবার ভেতরে ঢুকে দেখি, এমপির চেয়ারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব সাহেব বসে আছেন। আমি দুই-তিন মিনিট দাঁড়িয়েছিলাম। আমি বিব্রত হয়েছি। সেজন্য ইউএনও সাহেবকে বলেছি, আপনি আমাকে রিসিভ করলেন না কেন? আদবকায়দার একটা বিষয় আছে। তিনি অবশ্য ভুল স্বীকার করে মাইকে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব সাহেব হঠাৎ ফ্যাসাদ শুরু করেন।’
‘মোতালেব সাহেব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ওয়াক আউট করার আহ্বান জানাতে থাকেন। তিনি উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকলে আমি বলি, আপনি এমন করছেন কেন? তিনি আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেন। আমি বললাম, আপনি আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে এমন আচরণ করছেন। অতীতে জামায়াতের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ছিল। তারাও কোনোদিন আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেনি। আমি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বললাম, তোমাদের সবার ইউনিয়নে আমি ৫০-৬০ কোটি টাকা করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এক টাকাও দেবো না।’
এ বিষয়ে বক্তব্য উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মোতালেবের বক্তব্য জানা যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর এ আলম বলেন, ‘এমপি স্যার চেয়ার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আমি চেয়ার রেখেছিলাম। কিন্তু সেটাতে এসে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরুল আফসার বসে যান। এমপি সাহেব আসার পরও তিনি চেয়ার ছেড়ে যাননি। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ব্রিবত হয়েছেন। এসময় সভায় কিছু সময়ের জন্য বিশৃঙ্খলা হলেও পরে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং সভা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়ায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নদভী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন পেয়ে আবারও নির্বাচিত হন তিনি। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীর অভিযোগ, নদভী একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পরও তিনি জামায়াতের একাংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন।সূত্র : সারাবাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।