দুই কাঁধে দুই ফেরেশতা : মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। দুনিয়ার জীবনে আমাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। তাঁরা আমাদের নেক আমল, বদ আমল সবই লিখে রাখেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ রেখো! দুই গ্রহণকারী ফেরেশতা তার ডানে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ১৭)
তাফসিরবিদদের মতে, মানুষের দুই দিকে দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, ডান দিকের ফেরেশতা তার ভালো কাজগুলো লিখে রাখেন আর বাম দিকের ফেরেশতা তার মন্দ কাজগুলো লিখে রাখেন। (কুরতুবি)
প্রচলিত ভুল ধারণা : উপরোক্ত আয়াত দেখে অনেকে মনে করেন, মানুষের দুই কাঁধে দুই ফেরেশতা থাকে। এর সূত্র ধরে গ্রামে-গঞ্জে প্রচলিত আছে, বাচ্চাদের কাঁধে নেওয়া যাবে না। তাদের কাঁধে নিলে কাঁধে থাকা ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। তারা বদদোয়া দেয়। এটি একটি ভুল ধারণা।
পবিত্র কোরআনের উল্লিখিত আয়াতের তাফসিরে বেশির ভাগ তাফসিরবিদই বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষের দুই দিকে দুজন ফেরেশতা থাকে। দুই কাঁধে ফেরেশতা আছে, এমন দাবি কেউ করেছে কিনা তা আমার বোধগম্য নয়। যদি কেউ এই ব্যাখ্যা করেও থাকে, তবুও বাচ্চাদের কাঁধে নেওয়া অনুচিত বলা যাবে না। কারণ রাসুল (সা.) নিজেই বাচ্চাদের কাঁধে নিয়েছেন। যদি এটি ফেরেশতাদের জন্য কষ্টকর হতো, তাহলে তিনি কখনো এই কাজ করতেন না।
রাসুলের কাঁধে শিশু উমামা : আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কন্যা জয়নবের মেয়ে উমামাহ বিনতে আবুল আস ইবনে রবি-কে নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। তখন উমামাহ শিশু ছিলেন, রাসুলুল্লাহ তাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। তিনি রুকু করার সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন এবং দাঁড়ানোর সময় আবার কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে তিনি নামাজ আদায় শেষ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯১৮)
উল্লেখ্য, এই হাদিস দ্বারা এখানে শুধু রাসুল (সা.) কর্তৃক বাচ্চাদের কাঁধে নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু বাচ্চাদের কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কি না—সে ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য রাসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতিদেরও বিভিন্ন সময় আদর করে কাঁধে তুলেছেন।
রাসুলের কাঁধে প্রিয় নাতি হাসান : বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাসানকে নবী (সা.)-এর কাঁধের ওপর দেখেছি। সে সময় তিনি [রাসুল (সা.)] বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো। (বুখারি, হাদিস : ৩৭৪৯)
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, বাচ্চাদের কাঁধে না নেওয়ার ব্যাপারে গ্রাম-গঞ্জে প্রচলিত কথাটি সঠিক নয়। আমরা চাইলে রাসুল (সা.)-এর সুন্নত পালনের নিয়তে বাচ্চাদের কাঁধে তুলে নিতে পারি। তাদের জন্য দোয়া করতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।