জুমবাংলা ডেস্ক : একদিনে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের ৯টি কমিটি বিলুপ্ত করায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে৷ বিএনপি ধারাবাহিক কার্যক্রম বললেও কোনো কোনো নেতা বিষয়টিকে দেখছেন ‘ঝড়’ হিসেবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশের চারটি মহানগরে বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। অন্য দুটি কমিটি হলো চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি। এছাড়া যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও একই সঙ্গে বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরও চারটি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম- এই চারটি কমিটি বৃহস্পতিবার বিলুপ্ত করা হয়। এর আগে গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন রফিকুল ইসলাম ও নাছির উদ্দীন। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিও ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তারপর ২৫ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে ৯টি কমিটি বিলুপ্তির তথ্য জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ওই কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে। কমিটিগুলো বাতিল করা হলেও নতুন কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে শুধু বলা হয়েছে, বিলুপ্ত কমিটিগুলোর নতুন কমিটি পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার বিকালে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়, দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম। ওই কমিটিগুলোর মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাই বাতিল করা হয়েছে। দলকে শক্তিশালী করতে এই ধরনের সাংগঠনিক কাজ অব্যাহত থাকবে।”
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘দলকে আরো কার্যকর এবং গতিশীল করতে অবশ্যই দলে পুনর্গঠনের দরকার আছে৷ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চয়ই সেটা বুঝে কাজ করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
আর যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে দলের নেতা-কর্মীরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন৷ তবে তারপরও তো কিছু সমস্যা ছিল। সবার কাছ থেকে তো দল প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পায়নি।”
তার কথা, ‘‘আন্দোলনে কার কী ভূমিকা ছিল, এখন কে কী ভূমিকা রাখছেন তার একটি মূল্যায়ন তো আছে। আমরা আমাদের মতো মূল্যায়ন করেছি। স্থায়ী কমিটি মূল্যায়ন করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মূল্যায়ন আছে। সেই মূল্যায়নের পুরস্কার, তিরস্কার দুই দিকই আছে।” দলকে গতিশীল করার জন্যই এখন এইসব কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির ৭৭টি সাংগঠনিক কমিটি এক যোগে বিলুপ্ত করা হয়েছিল বলে বিএনপির এক নেতা জানান। ওই সময় কিছু নেতাকেও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল, যারা ‘মাইনাস টু থিওরি’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই নেতা বলেন, ‘‘এবার সেই শিক্ষা থেকেই কাজ হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিছু নেতা দলের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছেন, তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।”
বিএনপির আরেক নেতা বলেন, ‘‘যে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আব্দুস সালাম ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ আরো প্রভাবশালী নেতারা রয়েছেন। তারাই তো এখন আরো অনেক সিনিয়র নেতাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। তারা কী করেছেন জানতে চাইবেন। ফলে এটা কোন পর্যন্ত গড়ায় এখনই তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ আছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘কোনো একটি ইউনিটের সভাপতি গ্রেপ্তার হলে দেখা গেছে পুরো কমিটি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। কেউ জেলে গেলে বাকিরা আন্দোলন থেকে দূরে সরে গেছে। এটা আসলে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য খুবই খারাপ উদাহরণ।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘দলে গঠন, পুনর্গঠন আগেই দরকার ছিল। আমরা যেহেতু আন্দোলনে ছিলাম, তাই তখন করতে পারিনি। এটা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের সঙ্গে মতামত নিয়েছেন। সেটাই হয়তো এখন শুরু হয়েছে।”
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এটা শুরু হলো মাত্র। এটা অব্যাহত থাকবে। আরো অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে সেগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। দলকে আরো শক্তিশালী করতে এটা দরকার।”
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘গঠন ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে সুসংহত করা, ঐক্যবদ্ধ করা, শক্তিশালী করা এগুলোই মূল উদ্দেশ্য। দলের হাইকমান্ড সেটাই প্রত্যাশা করে। সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।