জুমবাংলা ডেস্ক : নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামে গত ১৮ জুন রাতে অটোরিকশা চালক মো. জিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তার অটো রিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে সংকটাপন্ন অবস্থায় জিয়ার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অটোরিকশা রেখে পালিয়ে যায় হত্যার সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা। পরে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত একজন যেভাবে পালিয়ে গিয়ে ধরা খেলেন তা চমকপ্রদ। ফজলে রাব্বা ওরফে ডিসপ্লে গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে চমকপ্রদ বর্ণনা দিয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ৫ জন প্রথমে স্থানীয় টেংগনমারীতে জড়ো হয়। এরপর আনন্দবাবুরপুল এলাকা থেকে ৩০০ টাকায় জিয়া অটোরিকশা ভাড়া করে হরিশচন্দ্র পাঠ যাওয়ার কথা জানায়। বাজারের ব্যাগ নিয়ে সাধারণ যাত্রীর বেশ ধরে চালকের দুই পাশে দুজন ও পেছনে তিনজন বসে ছিল। কিছু দূর যাওয়ার পর ফাঁকা রাস্তা দেখে তাদের মধ্যে একজন কৌশলে অটোরিকশা থামাতে বলে। তখন জিয়া ভয় পেয়ে অটো না থামিয়ে চালাতে থাকে। এসময় সামনে যাত্রীবেশে বসা দুই ছিনতাইকারী নিজেরা ব্রেক কষে অটো থামায়। পেছনে থাকা ছিনতাই চক্রের সদস্য রাব্বীসহ দুজন ড্রাইভারের বুক চেপে ধরে। একজন চালকের গলায় ছুরি দিয়ে পোচ মারে ও পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। এসময় চালক চিৎকার করলে তাকে ধাক্বা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় দুর্বত্তরা। পরে চালকের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন লাইট দিয়ে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা অটোরিকশা রেখে যে যার মতো পালিয়ে যায়। এই খবর এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ আসামিদের ধরতে চেকপোস্ট ও টহল জোরদার করে।
গ্রেফতার আসামি ডিসপ্লে পুলিশকে জানায়, হত্যার পর তার শার্ট ও লুঙ্গিতে রক্ত লেগে থাকায় পালিয়ে যাওয়ারকালে নদী পার হওয়ার সময় পরনের জামা ও লুঙ্গি ফেলে বিবস্ত্র হয়ে স্থানীয় চাড়ালকাটা নদীতে ঝাঁপ দেয় সে। এরপর নদী পার হয়ে ঘুঘুমারী গুচ্ছগ্রামে নদী তীরবর্তী জায়গায় উঠে। সেখানেই একটি বাড়ির বাইরে শুকানোর জন্য রাখা ওড়না দেখতে পায় ডিসপ্লে। এরপর সেখান থেকে ওড়না নিয়ে পরে ফেলে সে। ওই ওড়না পরিহিত অবস্থায় খুনি রাতেই পাঠানপাড়া বাজারের দিকে যায়। সেখানে একটি দোকানে গিয়ে লুঙ্গি চায়। দোকানদার তাকে লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরতে দেয়। দোকানদারসহ আশপাশের লোকজন ডিসপ্লেকে প্রশ্ন করলে এলোমেলো উত্তর দেয় সে। এতে স্থানীয়দের সন্দেহ তৈরি হয়। বাজারের লোকজন আগে থেকে এলাকায় এক অটোরিকশা চালকের হত্যার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। লুঙ্গি চাওয়া ওই ব্যক্তির আচরণ ও উত্তর সন্দেহজনক হওয়ায় তারা মীরগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। এরপরই নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিনের নেতৃত্বে থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার টিম সেখানে পৌঁছায়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ডিসপ্লে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, রক্তমাখা পোশাক নদীতে ফেলে বিবস্ত্র হয়েই নদী পার হয়।
নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান জানান, ১৯ জুন আসামিকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালিয়ে ওড়নার মালিককে পাওয়া গেছে। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানোর কারণে স্থানীয় প্রায় সবাই হত্যার বিষয়টি জেনে যায়। এ কারণে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি বাজারে গেলে স্থানীয়রা পুলিশকে অবহিত করে। যে কোনো অপরাধ মোকাবেলা ও অপরাধীকে ধরতে কমিউনিটিতে এই ধরনের সচেনতা থাকলে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আমারাও কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট আরও বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।