স্পোর্টস ডেস্ক : আগামী ১১ জুলাই ব্রাজিলের ফুটবল তীর্থ মারাকানায় কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে নামবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই লাতিন পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।
ফাইনাল এমনিতেই রোমঞ্চকর, তারমধ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ, নেইমার-মেসির শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। সবমিলিয়ে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের পারদ বেড়ে অসীম পর্যায়ে উঠেছে।
এমন ফাইনালই চায় ফুটবলপ্রেমীরা। তার ওপর ১৪ বছর পর দেখা হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর। যে কারণে ফাইনালকে ঘিরে এখন থেকেই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
ঘাটাঘাটি হচ্ছে অতীত ইতিহাস ও জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান। শতবছরের বিশ্বকাপের আলোচিত ঘটনাগুলোও সামনে এসে ধরা দিচ্ছে।
এমন মুহূর্তে আলোচনায় এসেছে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের একটি বিতর্কিত ঘটনা। যা ফুটবল ডিকশনারিতে ‘দ্য হলি ওয়াটার স্ক্যান্ডাল’ নামে পরিচিত।
ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেরই জানা সেই ঘটনা। যেখানে আর্জেন্টিনা দলের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল গুরুতর এক অভিযোগ।
ওই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে দুর্দান্ত ম্যারাডোনাকে রুখতে যারপরনাই চেষ্টা করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার (লেফট ব্যাক) ব্রাঙ্কো।
অভিযোগ রয়েছে, ব্রাংকোকে পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ ট্র্যাঙ্ক্যুলাইজার মিশিয়ে খাইয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফিজিও। যাতে ম্যারাডোনা স্বাচ্ছন্দে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে পারেন।
ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যায়, বিরতির কিছু আগে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় পেদ্রো থ্রলিগো আহত হলে তাকে সেবা করতে আসেন ফিজিও। এ সময় আর্জেন্টাইন ফিজিওর কাছে পানির বোতল চান ব্রাঙ্কো। আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন আর্জেন্টিনা দলের ফিজিও। ব্রাঙ্কোকে ঘুমের ওষুধ ট্র্যাঙ্ক্যুলাইজার মেশানো পানির বোতল দেন তিনি। ব্যস, তাতেই কাজ হয়ে যায়। সেই পানি পান করে বিরতির পর মাঠে নামেন ব্রাঙ্কো। ঘুমের ঘোরে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে থাকে তার। ম্যারাডোনাকে আটকাবেন কি নিজেকেই সামলাতে পারছিলেন না ব্রাঙ্কো।
আর সুযোগ কাজে লাগান ম্যারাডোনা। ৩ ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে ক্লডিও ক্যানিজিয়াকে ডি-বক্সে বল বানিয়ে দেন ম্যারাডোনা। ক্যানিজিয়া ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দেন অনায়াসেই।
আর ওই গোলেই নব্বইয়ের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যায় ব্রাজিলের। ১-০ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচ হারের পর ব্রাঙ্কো দাবি করেন, আর্জেন্টাইন ফিজিওর দেওয়া সেই পানি পান করার পর থেকে তার শরীর অসার হতে থাকে। সামনের সবকিছু ঘোলাটে দেখতে থাকেন। আর তার এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে গোল আদায় করে আর্জেন্টিনা।
যদিও ব্রাঙ্কোর এই দাবিকে সে সময় ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল এসোসিয়েশন। তত্কালীন আর্জেন্টাইন কোচ কার্লোস বিলার্দোও এমন কিছু ঘটেছিল বলে স্বীকার করেননি।
ব্রাঙ্কোর এমন অভিযোগের বিষয়ে তৎকালীন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সেক্রেটারি ম্যাকরো অ্যান্তনিও টেইক্সেরিয়া বলেন, ‘এটা অত্যন্ত ভয়াবহ অভিযোগ। আমরা এ বিষয়ে সব তথ্য আগামী সপ্তাহে ফিফার কাছে পাঠাব। যদি এর মধ্যে তারা কোনো সত্যতা খুঁজে পায় তবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে। ’
কিন্তু ফিফা এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সে সময়। এরপর থেকে বিষয়টি ‘দ্য হলি ওয়াটার স্ক্যান্ডাল’ নামে ইতিহাস হয়ে গেল।
ওই ঘটনার ১৫ বছর পর অর্থাৎ ২০০৫ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনা এক সাক্ষাৎকারে সবাইকে চমকে দেন। ‘দ্য হলি ওয়াটার স্ক্যান্ডাল’ঘটনাটির কথা স্বীকার করেন। ব্রাঙ্কোকে দেওয়া পানিতে ট্র্যাঙ্ক্যুলাইজার ড্রাগ মেশানো ছিল বলে জানান ম্যারাডোনা।
ম্যারাডোনার এমন সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হতে না হতেই ফুঁসে ওঠে সেলেকাওরা। আর্জেন্টাইনদের ধুয়ে দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
সবচেয়ে বেশি ঝাঁঝালো মন্তব্য এসেছিল নব্বইয়ে ব্রাজিল দলের কোচ সেবাস্তিও লাজারনির মুখ থেকে। আসাটাই স্বাভাবিক। কারণ ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ঘণ্টা বাজার পাশাপাশি লাজারনিরও কোচিং ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়।
তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘ম্যারাডোনার এই স্বীকারোক্তিতে বোঝা গেল, এটা আর্জেন্টিনা দলের নোংরা ও অপেশাদারিত্বের উদাহরণ। ফিফার এখনই উচিত আর্জেন্টাইন কোচ বিলার্দো আর তাদের ওই ফিজিওকে শাস্তি দেওয়া। ঘটনার ১৫ বছর পার হয়ে গেলেও তাদের শাস্তি দেওয়া উচিৎ। কারণ এমনটা তারা আবারও করবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?’
The Holy Water Scandal of 1990 World Cup
On 24 June 1990, Argentina eliminated Brazil from the World Cup, allegedly through the use of a spiked water bottle.
Thread… pic.twitter.com/C24NrgQx2P
— # (@dragonfaya) December 11, 2020
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, গোল ডট কম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।