জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন নিয়মের পর ভবনের নকশার অনুমোদনে সীমাহীন যন্ত্রণায় পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। রাজধানীতে প্রতিবছর কমবেশি ১০ হাজার ভবনের নকশার অনুমোদন দেয় রাজউক। নতুন নিয়মে চার হাজার ভবনের অনুমোদনের দায়িত্ব দুটি বিশেষ কমিটির। আর ছয় হাজার ভবনের অনুমোদন দিচ্ছে ২৪টি সাধারণ কমিটি। গত ২৮ মে ভবনের নকশা অনুমোদনবিষয়ক এই ২৬টি বিসি (বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন) কমিটি গঠন করে রাজউক।
অমিতোষ পালরে করাসমকালে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুটি বিশেষ কমিটি আটতলা ও তার ওপরের ভবনগুলোর নকশার অনুমোদন দেবে। সাততলা ও তার নিচের ভবনের নকশার অনুমোদন দেবে বাকি ২৪টি কমিটি। বোর্ড সদস্য (পরিকল্পনা) ও বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ)– এ দু’জনকে প্রধান করে বিশেষ দুটি কমিটির প্রতিটিতে সদস্য রাখা হয়েছে সাতজনকে। অন্যদিকে বাকি ২৪টি কমিটির প্রতিটিতে পাঁচজন সদস্য রাখা হয়েছে। একজন আঞ্চলিক পরিচালককে প্রতি কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, এ বছরের কর্মদিবস ২৩৯ দিন। এর বাইরে বিশেষ প্রয়োজনে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দু-চার দিন ছুটি থাকে। এই হিসাবে প্রতিদিন ১৭টি করে নকশা অনুমোদন করতে হবে ওই বিশেষ দুই কমিটিকে। তারা অনেক ক্ষেত্রে এক মাসেও ১৭ নকশার অনুমোদন দিতে পারেনি। ফলে বহুতল ভবনের নকশার আবেদনকারীদের আবেদনপত্র মাসের পর মাস ঝুলে থেকেছে। নতুন নিয়মের কারণে এই ঝুলে থাকার সময় আরও বেড়ে যাবে।
রাজউকের একটি অঞ্চলের পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিশেষ কমিটির কর্মকর্তারা সব সময় সভা-সেমিনারে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে সময় আরও বেশি লাগবে। এবার আটতলা ভবনের নকশার অনুমোদনও বিশেষ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগে আটতলা পর্যন্ত সাধারণ কমিটির এখতিয়ারে ছিল।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, যারা এ নিয়ম করেছেন, তারা কেউ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি নন। নন-টেকনিক্যাল বোর্ড সদস্য ও পরিচালকদের ভুল চিন্তার কারণে টেকনিক্যাল কর্মকর্তাদের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি, বিশেষ কমিটিতে উপস্থাপন করা নথিগুলোতে একজন সদস্য আপত্তি দিলে সেগুলো এক-দুই বছরেও আর আলোর মুখ দেখে না। এসব কমিটিতে টেকনিক্যাল পারসন থাকলে এ সমস্যা হতো না। বিশেষ কমিটিগুলো যেহেতু বড় বড় ভবনের অনুমোদন দেয়, তাই সেখানে অনুমোদনের উৎকোচও বেশি থাকে। সেই ভাগ তারা অন্য কাউকে দিতে চান না। এ জন্য আটতলা ভবনের নকশাও বিশেষ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাজউক সূত্র জানায়, তিন বছর পরপর বিসি কমিটি পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতায় এবারও কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজউকের পরিচালক (পরিকল্পনা) শামসুল হক ছিলেন এই কমিটি প্রণয়নের মূল দায়িত্বে।
শামসুল হক বলেন, আগেও এভাবেই কমিটি হয়েছে। ড্যাপে এখন বহুতল ভবনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সাততলার ওপরের ভবনগুলোর আবেদন কমবে। এ জন্য তাদের ওপর চাপ পড়বে না।
জানা গেছে, রাজউক থেকে এই কমিটির প্রস্তাব পাঠানোর পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সেটার হুবহু অনুমোদন দিয়ে দেয়। অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-১) মোঃ অলিউল্লাহ বলেন, এখানে রাজউক যেভাবে পাঠিয়েছিল, সেভাবেই মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন ছিল।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, আগে বহুতল ভবনের নকশার আবেদন বেশি পড়ত। তবে নতুন ড্যাপে বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে এখন সাততলার ওপরের ভবনের নকশার আবেদন কম পড়ছে। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা না।
অবশ্য রাজউকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্যাপে বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও আবেদন কমেনি। বরং আগের চেয়ে বহুতল ভবনের আবেদনই বেশি জমা পড়ছে। কেউ আর এখন কম উচ্চতার ভবন তৈরি করতে চাইছে না বলে জানান রাজউকের এক কর্মকর্তা।
নকশার আবেদনকারীরা জানান, এতদিন শুধু ভবনের আর্কিটেকচারাল প্ল্যান জমা দিয়ে নকশার আবেদন করা যেত। রাজধানীতে কয়েকটি অগ্নিদুর্ঘটনার পর গত ১ জুন থেকে ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন, মেকানিক্যাল ডিজাইন ও প্লাম্বিং ডিজাইন জমা দেওয়ার নিয়ম চালু করে রাজউক। এত সব নকশা যাচাই-বাছাই করতে বিশেষ কমিটিকে আরও অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। তারা কখনোই এত সময় পাবে না। কোনো রকম চোখ বুলিয়ে নকশার অনুমোদন দিতে হবে। এ জন্য আবেদনকারীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। একই অবস্থা হবে সাধারণ কমিটিগুলোর ক্ষেত্রেও।
এ ব্যাপারে রিহ্যাব সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, এসব করে আসলে জনগণের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে। ৪৫ দিনের মধ্যে নকশার অনুমোদন দেওয়ার কথা বললেও এখন সেটা একেবারেই অসম্ভব। এমনিতেই রাজউকে গেলে যন্ত্রণার শেষ নেই। এ নিয়ম এখন নগরবাসীকে আরও বিপদে ফেলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।