স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়েছে পাকিস্তান। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের দেওয়া ১৫২ রানের টার্গেটে অধিনায়ক বাবর আজম ও উইকেটরক্ষক মোহাম্মাদ রিজওয়ানের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১০ উইকেটে জয় পায় তারা।
তবে এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বারুদে ঠাসা ম্যাচটা এগিয়ে আসার আগে থেকেই পাক মুলুকের অনেকেই বলেছিলেন, এবার হয়তো ইতিহাসের চাকা ঘুরবে।
এক ব্যবসায়ী পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে রেখেছিলেন, ভারতকে হারাতে পারলে যে কোনও অর্থ দিতে তিনি প্রস্তুত। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একটা গরিষ্ঠ অংশ আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে ভারতকে এগিয়ে রেখেছিলেন।
কিন্তু বাবর আজমরা বহির্বিশ্বের কোনও কথায় কান দেননি। নীরবে নিভৃতে নিজেদের তৈরি করেছিলেন বিশ্বকাপের সব চেয়ে টেনশনের ম্যাচটার জন্য। মাঠে সেই ছবিই দেখা গেল রবিবার।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান কত দূর এগবে, তা বলবে সময়। কিন্তু এই উপমহাদেশে ভারত-পাক ম্যাচ মানেই ফাইনাল, আবেগের চোরাস্রোত। এই একটা ম্যাচ জিতলেই সব জেতা হয়ে যায়। বারুদে ঠাসা ম্যাচ জিতে বাবর আজমরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে গেলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটকে।
প্রায় কোমায় চলে যাওয়া একটা দেশের ক্রিকেটে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেলেন তারা। বহু গৌরবের সাক্ষী থাকা মরুশহরেই পুনর্জন্ম ঘটল পাক-ক্রিকেটের। এভাবেও যে ফিরে আসা যায়, তা দেখিয়ে দিল পাকিস্তান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সম্পূর্ণ অন্য কারণে খবরের শিরোনামে এসেছেন পাক অধিনায়ক বাবর আজম। মহাযুদ্ধের জন্য নির্বাচিত স্কোয়াড নিয়ে খুশি ছিলেন না তিনি। আপাতদৃষ্টিতে, দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বাবর আজম। এমনটাই শোনা গিয়েছিল।
দল বাছাই নিয়ে বোর্ড নাকি বাবর আজমকে উদ্বিগ্ন হতে দেয়নি। আজম যাতে নিজের খেলায় মনোনিবেশ করতে পারেন, তাই তাকে দল নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। অধিনায়ককে বাদ দিয়েই দল নির্বাচন করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
খবর ভেসে এসেছিল, আজম খান, সোহেব মাকসুদের মতো কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাবর। ফাহিম আশরাফ, ফখর জামানের মতো অভিজ্ঞদের দলে চেয়েছিলেন বাবর আজম। এদিকে আজম খানের নির্বাচন নিয়ে পিসিবির সঙ্গে মতবিরোধের পর প্রধান কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেন মিসবাহ-উল-হক।
দল নির্বাচন নিয়ে পিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম খানের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বলে জানা যায়। সরে যান ওয়াকার ইউনিসও। পাক ক্রিকেটেও জোর আলোচনা শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোহলির পথে হাঁটবেন বাবর আজম। তিনিও টি টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন।
যদিও বাবরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, আমার এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন ধারণা নেই।
এখানেই শেষ নয়,আরও আছে। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান সফর বাতিল করে দিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ওয়ানডে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে টসই হয়নি। টসের ঠিক আগের মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন কিউই ক্রিকেটার। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাজনিত কারণেই বাতিল হয়ে যায় সেই সিরিজ।
কিউইদের পরে পাকিস্তান সফর বাতিল করে ইংল্যান্ডও। কিউইরা পাক সফর বাতিল করার পরেই উঠেছিল প্রশ্ন, ইংল্যান্ড আদৌ খেলতে যাবে তো ইমরান খানের দেশে?
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়ে দেয়, ইংল্যান্ডের মহিলা ও পুরুষ জাতীয় দল পাক-মুলুকে গিয়ে খেলবে না। নিরাপত্তাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দু’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। কিন্তু সিরিজ বাতিল হয়ে যাওয়ায় সব দিক থেকেই ধাক্কা খেয়েছিল পাকিস্তান।
দানিশ কানেরিয়ার মতো প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার বলেছিলেন, নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটো সিরিজ খেললে পাকিস্তান ভাল জায়গায় থেকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামতে পারত। কিন্তু বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদিরা সবাইকেই ভুল প্রমাণ করেছেন।
বিরাটরা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। কে ভেবেছিলেন, এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোহলিদের দেখতে হবে ম্যাচের রাশ আলগা হতে হতে তা হাত থেকেই বেরিয়ে যাবে। চুরমার হয়ে যাবে বিশ্বকাপে অতীতের সব গর্বের রেকর্ড।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেট ঘুরে দাঁড়াল। শুধু ঘুরে দাঁড়ালই না এমন একটা নক আউট পাঞ্চ দিয়ে গেল ভারতকে, যে অনেকেই সংশয়ে এই হারের শোক কাটিয়ে টুর্নামেন্টে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো বিরাট-বাহিনী!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।