জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বজুড়েই ভিখারিদের এক অবস্থা। বিশ্বজুড়ে যেখানেই আপনি ভিক্ষুকের কোলে ছোট কোনো বাচ্চা দেখতে পাবেন, খেয়াল করে দেখবেন বাচ্চাটি ঘুমিয়ে আছে। কী বাংলাদেশ, আর কী ব্যাংকক, আমেরিকা। কখনও কি মনে প্রশ্ন জেগেছে, ভিক্ষুকের কোলের বাচ্চাটি সবসময় ঘুমিয়ে থাকে কেনো?
এই প্রশ্নের উত্তরের পিছনে রয়েছে, ভয় জাগানিয়া দারুণ বীভৎস এক কাহিনী। এই চিত্র শুধু কোনো একটি দেশের নয়। পৃথিবীর সব দেশের কাহিনী প্রায় একইরকম। ভিক্ষুকদের পিছনে কাজ করে সুসংগঠিত সন্ত্রাসী মাফিয়া বাহিনী, যারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকা প্রায় প্রতিটি ভিক্ষুককেই পরিচালনা করে।
এই মাফিয়া গ্রুপগুলো ভিক্ষুকদেরকে নিজেদের জিম্মায় রাখে। প্রতিদিন সকালে নিজেদের দায়িত্বে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এনে বসিয়ে দিয়ে যায়। আবার সন্ধ্যা হলে নিজেদের দায়িত্বেই তাদেরকে আখড়ায় ফিরিয়ে নেয়। এরপর ভিক্ষুকের সারাদিনের যা ‘আয়’ তার সবটুকুই চলে যায় ওই মাফিয়া গ্রুপের হাতে। ভিক্ষুকের কপালে জোটে শুধু এক বেলার খাবার।
খেয়াল করবেন, রাস্তার পাশে ছোট শিশু নিয়ে যারা ভিক্ষা করছে তাদের অধিকাংশেরই কোলে থাকা শিশুটি ঘুমে বিভোর। কোলে নেয়া মহিলাটির ভাঁজ করা পায়ে নাকমুখ গুঁজে চুপচাপ ঘুমাচ্ছে শিশুটি। আর রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা তাদের ব্যথায় সমব্যথী টাকা দান করে যাচ্ছেন।
একটি শিশু সারাদিন চুপচাপ ঘুমিয়ে কাটায় কিভাবে? তাও আবার ব্যস্ত সড়কের পাশে হাজারো গাড়ির হর্ন এবং নানা রকম শব্দের মাঝে? এখানেই রয়েছে চমকে যাওয়ার মতো উত্তর।
প্রতিদিন ভিক্ষা করতে আসার আগে কোলের ওই শিশুটিকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়, তারপর সারাদিন ধরে নির্বিঘ্নে ভিক্ষাবৃত্তি চলে। এইভাবে দিনের পর দিন নেশাদ্রব্য খাওয়ানোর ফলে কিছুদিন পরেই ওই শিশুটি মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। তারপর ওই শিশুটির স্থান দখল করে নেয় অন্য কোনো শিশু। ফলে আরও একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, কিছুদিন পরপরই তাদের কোলের শিশুটি বদলে যাচ্ছে। নতুন নতুন শিশু কোলে নিয়ে দিনের পর দিন একইভাবে চলছে ভিক্ষাবৃত্তি।
প্রশ্ন উঠে, এতো এতো বাচ্চা-শিশু ওই মাফিয়া গ্রুপগুলোর হাতে কোত্থেকে আসে? আসলে এদের অধিকাংশই চুরি করা শিশু অথবা টাকার অভাবে থাকা মাদকসেবী পরিবারের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া।
দেশের প্রথম সারির দৈনিক প্রথম আলোতে এমন একটি ঘটনা উঠে এসেছিলো। ৩০-১২-২০১০ তারিখে ‘শিশুদের পঙ্গু করে নামানো হচ্ছে ভিক্ষায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপায় পত্রিকাটি।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে একটি প্রভাবশালী চক্র বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের ধরে নিয়ে গিয়ে পঙ্গু বা অচল করে দেয়। তারপর তাদেরকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ভাড়া দেয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, একটি অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভেতর টানা ছয় মাস আট-নয় বছরের এক শিশুকে জড়সড় করে আটকে রাখা হয়।
সারাদিনে শুধু একবার সামান্য ভাত অথবা রুটি-পানি দেয়া হতো তাকে। এইভাবে দিনের পর দিন একটি পাতিলের ভিতর থাকতে থাকতে শিশুটি কঙ্কালসার হয়ে পড়ে। এরপর তাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়। এছাড়া অনেক শিশুকেই ধরে এনে কব্জি, পায়ের রগ, পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়ে অথবা বুকে, ঘাড়ে, মাথায় আঘাত করে অচল বানিয়ে দেয়া হতো। তারপর তাকে দিয়ে চলতো ভিক্ষার ব্যবসা।
সারা বিশ্বেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে অথবা তাদের সাথে যোগসাজশ রেখেই এসব ব্যবসা চলে। তাই এদেরকে সামাজিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এখন থেকে কোলে শিশু নিয়ে থাকা কোনো ভিক্ষুককেই আর কখনো টাকা-পয়সা দান করবেন না – এই প্রতিজ্ঞা নিন। খাবার, পানি দিতে পারেন, কিন্তু টাকা-পয়সা কখনোই নয়। আপনার এই অভ্যাসে হয়তো বেঁচে যাবে কোনো একটি শিশুর প্রাণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।