সাকি হাসপাতালে। হঠাৎ অসুস্থ তিনি। এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ভোররাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাকির ঘটনায় মর্মাহত সিলেট সিটি করপোরেশনের নারী কাউন্সিলররা। ‘নিরাপত্তাহীন’ হয়ে পড়ছেন তারা। এ কারনে তারা নগর ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন। তাদের দাবি- সহকর্মী সাকিকে হাসপাতালে রেখে তারা কর্মসূচি পালনে যেতে পারেন না। এ কারণে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
এদিকে- সাকি অসুস্থতার খবর পেয়ে সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সাকির শারীরিক অবস্থার খোজ খবর নেন। সাকির পুরো নাম মাসুদা সুলতানা সাকি। বাড়ি সিলেট নগরীর শেখঘাটে। তিনি সিলেট করপোরেশনের ১০, ১১ ও ১২ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর। গত সিটি নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এবার সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কার্যক্রমের উপর ক্ষুব্ধ কাউন্সিলর সাকি সহ নগরের ৯ মহিলা কাউন্সিলররা। এই ক্ষোভের কারণ হলো- করোনাকালীন সময়ে সিলেটে ত্রাণ বিতরণ করছেন তাতে নগরের নারী কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করা হয়নি।
পরিপত্রের দোহাই দিয়ে মেয়র তাদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মহিলা কাউন্সিলররা। এ নিয়ে তারা নিজেরা বুধবার নগর ভবনে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে তারা মেয়র আরিফের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ত্রান কার্যক্রমে তাদের অর্ন্তভুক্ত করার দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন। আর এই কর্মসূচি ঘোষণায় সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়। নারী কাউন্সিলরদের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলেন অনেকেই। এদিকে- মধ্যরাতে নগরীর শেখঘাটে নারী কাউন্সিলর সাকির বাসায় ঘটে আরেক নাটকীয় ঘটনা।
শেখঘাটের জুনেল ও সালামের নেতৃত্বে একদল যুবক যায় সাকির বাসায়। তখন রাত ১২ টার হবে। ওই যুবকরা গিয়ে বাসা থেকে ডেকে সাকিকে বারান্দায় আনেন। এ সময় যুবকরা সাকিকে জানায়- সিলেট করপোরেশনে মহিলা কাউন্সিলরদের অনুষ্টানে তিনি যেনো না যান। এতে ১২ নং ওয়ার্ডে ত্রাণ কার্যক্রম মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কমিয়ে দিতে পারেন। তারা এ সময় আরো বলেন- ‘১২ নং ওয়ার্ডে ৩ বার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আপনি নিজেও গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। সুতরাং ত্রান নিয়ে তো কোনো দাবি নেই।’ যুবকরা কাউন্সিলর সাকির বাসায় যাওয়ার দৃশ্যটি মোবাইল ফোনে লাইভ করেন সাকির পক্ষের কেউ। আর এই লাইভে পুরো দৃশ্যটি উঠে এসেছে। মোবাইল ফুটেজে দেখা গেছে- সাকির বাসায় আগত যুবকরা বার বার তাকে অবস্থান কর্মসূচিতে না যেতে বারণ করছেন। কিন্তু সাকি এতে তাদের উপর আরো ক্ষুব্ধ হচ্ছে। সাকি বলছেন- ‘ওসব মেয়র সাব করাচ্ছেন। এই কর্মসূচি তো আমার না। এটি সকল নারী কাউন্সিলরদের। আমি ওদের সঙ্গে আছি মাত্র।’
তিনি এসব কথা বলে আগত যুবকদের বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে এক সময় বলে উঠেন- ‘প্রয়োজনে আমার লাশ গিয়েও কর্মসূচিতে অংশ নেবে।’ এমন সময় এলাকার মুরব্বী এসে আগত যুবকদের সরিয়ে দেন। পরে তারা নগরীর শেখঘাটের জিতু মিয়ার পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে স্থানীয় ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলী জানান- ‘সাকির বাসায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তিনি অসুস্থ থাকায় পরে বিষয়টি শুনেছেন।’ এদিকে- এ ঘটনার পর ভোররাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কাউন্সিলর মাসুদা সুলতানা সাকি। পরিবারের সদস্যরা তাকে এ সময় সিলেটের তালতলাস্থ পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরিবারের সদস্যরা জানান- ভোররাতে সাকি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার কারনে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তাররা তাকে বিশ্রামে রেখেছেন। সকালে খবর পেয়ে কাউন্সিলর সাকিকে দেখতে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও মহিলা কাউন্সিলরদের আন্দোলনের ‘দলনেতা’ এডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ জানিয়েছেন- ‘সাকির বাসায় মধ্যরাতে যুবকরা গিয়ে যা ঘটিয়েছে তা ন্যক্কারজনক। কোনো সভ্য সমাজের এ ধরনের ঘটনা মানায় না। সাকি এখন অসুস্থ, এ কারনে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সে সুস্থ হলে আমরা পুনরায় কর্মসূচি শুরু করবো।’ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- ত্রাণ বিতরণে সব এলাকায়ই নারী কাউন্সিলররা সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাদেরকে আলাদা করে দেওয়া হয়নি। এখন বিষয়টি দেখা হবে। সূত্রঃ মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।