জুমবাংলা ডেস্ক : মাদকের টাকার জন্য মাকে মারধর ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় সেই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার নাম মিল্লাত হোসেন। সোমবার ভোরে রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর এইচ এম পারভেজ আরেফিন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি দেশীয় ওয়ানশুট্যার গান ও তিন রাউন্ড গুলি।
মাদকের টাকার জন্য ঘরে ভাঙচুর ও টাকা না পেলে মাকে মারধর করত মিল্লাত। প্রাণ বাঁচাতে ‘ঘরবন্দি’ থাকতেন মা। বেশ কয়েকবার ছেলের মারধরের কারণে গুরুত্বর আহত হন ওই মা। সবশেষ ৭ মে লাঠি দিয়ে মাকে বেধড়ক পেটানো হয়। নিরুপায় হয়ে পরের দিন (৮মে) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মা। সেই মামলায় অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তার করল পুলিশের এই এলিট ফোর্সটি।
মেজর আরেফিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল অভিযুক্ত মিল্লাত বাড়ির দিকে আসছে। কারণ দুইদিন আগেও সে বাড়িতে গিয়ে মাকে হুমকি দিয়ে এসেছিল। এমন খবরে গভীর রাতে পান্থপথের পানি ভবনের সামনে (ফুটওভারের নিচে) নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। নিরাপত্তা চৌকিতে প্রতিটি গাড়ি পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এসময় দূর থেকে একজন বাইকার র্যাবকে দেখে বাইক ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। কয়েকজন সদস্য দৌড়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।’
‘ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হবে জানালে সে (মিল্লাত) বাইক ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ধরে তল্লাশির এক পর্যায়ে মিল্লাতের বাইকের মিটারের সামনে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগ থেকে একটি ওয়ানশুট্যার গান, তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজধানীর কলাবাগান থানার গ্রিনরোড এলাকায় থাকেন ওই নারী। স্বামী খান শাহাদাত হোসেন দুই বছর আগে মারা গেছেন। এক মেয়ে সরকারি চাকরিজীবী। ছেলে মিল্লাত হোসেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময় অসৎ সঙ্গে মেলামেশার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য মাকে মারধর ও ঘরে ভাঙচুর করত। একাধিকবার তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও সংশোধন হয়নি। বরং বর্তমানে তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, ৭ মে মধ্যরাতে ছেলে মিল্লাত মা নুরুন্নাহার রুনুকে মারধরের করে। মধ্যরাতে মাদক কেনার টাকার জন্য মিল্লাত প্রথমে মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মারধর করলে তিনি মাথা ও কানে আঘাত পান। এর আগেও ছেলে তাকে মাদকের টাকা না পেয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি (মা) ঘটনার পরেরদিন কলাবাগান থানায় ছেলের নামে মামলা করেন।
নুরুন্নাহার মামলার পরের দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঘটনার দিন মিল্লাত অতিরিক্ত মারধর শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টা জিম্মি করে পেটাতে থাকে। বাথরুমেও যেতে দেয়নি। এরপর আমি ঘর বের হয়ে দৌড়ে নিচে যাই। নিচতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল দিলে তারা অনেকক্ষণ পর দরজা খোলে। আমি তাদের পা-হাত ধরে আশ্রয় চাই। এরপর তারা আমাকে আশ্রয় দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে মিল্লাতকে বাসা থেকে বের করে দেয়। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি সে আবার বাসায়। পরে আমার চিৎকারে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
র্যাব কর্মকর্তা মেজর আরেফিন বলেন, ‘যেহেতু আমরা তাকে খুঁজছিলাম তাই সে দিনে ঘোরাঘুরি কম করত। বিশেষ দরকারে রাতে বের হত। সবশেষ শুক্রবার রাতেও কয়েক মিনিটের জন্য বাসায় আসে মিল্লাত। এসময় মাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হুমকি দেয়। না হলে মাকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে আসে।’
তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা কি নেওয়া হবে জানতে চাইলে মেজর আরেফিন বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর পরই তার বিরুদ্ধে সকল কাগজ প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা তাকে কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।