আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরোপ করা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মালয়েশিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। এতে বিক্ষোভে পার্লামেন্টে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এগিয়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিনের ওপর চাপ বাড়ছে।
ফেসমাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শনিবার (৩১ জুলাই) এ বিক্ষোভ হয়েছে। তাদের হাতে বিশাল ব্যানার ও কালো পতাকা দেখা গেছে। তারা সরকারের ব্যর্থতা তুলে স্লোগান দিয়েছেন।
প্রতিবাদের আয়োজকরা বলছেন, এদিন অন্তত এক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। যদিও পুলিশ বলছে, সংখ্যাটা চারশ জনের বেশি হবে না।-খবর আলজাজিরার।
এ সময়ের জন্য এটিকে উল্লেখযোগ্য বড় বিক্ষোভ হিসেবেই আখ্যা দেওয়া যায়। কারণ সংক্রমণের ভয়ে লোকজন রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছেন। সরকার মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সংকটে-বিভক্ত প্রশাসনকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছেন মাহিউদ্দিন ইয়াসিন।
কুয়ালালামপুরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কারমুন লোহ বলেন, মানুষের ভোগান্তি দেখে আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। সরকার এখন রাজনৈতিক খেলা নিয়ে মেতে উঠেছে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। সরকারে আমাদের অর্থনীতিকে ভেঙে ফেলেছে এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
মহিউদ্দিনকে এক ভয়ঙ্কর প্রধানমন্ত্রী বলে উল্লেখ করে শাখ কোয়োক নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, তার এখন পদত্যাগ করার সময় হয়েছে। এদিকে জরুরি অধ্যাদেশ বাতিল নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে মহিউদ্দিন ইয়াসিনকে ভর্ৎসনা করেছেন দেশটির রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ।
বৃহস্পতিবারের (২৯ জুলাই) এই তিরস্কারের পর বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় অংশ তার পদত্যাগ দাবি করেছে। রাজার এই ভর্ৎসনাকে ‘বিরল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চলতি সপ্তাহে মহিউদ্দিনের সরকার জানিয়েছিল, ২১ জুলাই সব অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণে গত জানুয়ারিতে জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় এসব অধ্যাদেশ কার্যকর করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিনের পরামর্শেই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ। তখন বলা হয়েছিল—মহামারির বিস্তাররোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। কিন্তু সমালোচকেরা এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পরেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন মহিউদ্দিন। এটিকে তার ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে রাজপ্রাসাদ জানিয়েছে, রাজার মতামত না নিয়েই অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এভাবে কেন্দ্রীয় সংবিধান ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু মহিউদ্দিনের অফিস বলছে, সংবিধান স্বীকৃত আইন মেনেই তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে বেআইনিভাবে কিছু করা হয়নি।
শাসক জোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সরে দাঁড়িয়েছেন। তখন থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।
সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন মহিউদ্দিন। গত বছরের ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চলছে। সেখানে রাজার ভূমিকা অনেকটা আনুষ্ঠানিক। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শ নিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কিনা; রাজা সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। বহু-জাতিগোষ্ঠীর মালয়েশিয়ায় রাজার মতামতের প্রতি গুরুত্ব ও সম্মান দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার ক্ষেত্রেও তাকে প্রয়োজন পড়ে।
ক্ষমতাসীন জোটের বড় অংশই উমনো পার্টির। রাজার ডিক্রি অমান্য করায় মহিউদ্দিনকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এছাড়া এ নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উমনোপ্রধান আহমাদ জাহিদ হামিদি বলেন, মহিউদ্দিনের পদক্ষেপ রাজার সঙ্গে স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনাস্থার আবেদন করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা আনওয়ার ইব্রাহীম। তিনি বলেন, পার্লামেন্টের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান না।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি বলেন, পার্লামেন্টের ২২২ সদস্যের মধ্যে ১১০ জনই সরকারকে সমর্থন করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।