আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন- এই খবরটি এরই মধ্যে চাওর হয়ে গেছে। কিন্তু এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়া আলোচিত ব্যক্তি কেন কানাডায় আবার আশ্রয় চাইতে গেলেন, এ নিয়ে উঠা প্রশ্নের জবাবও পাওয়া গেছে।
কানাডার অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম ‘কানাডা কুরিয়ার’ এর একটি লেখায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতির আবেদন গৃহীত হয়। কিন্তু তার অসুস্থ স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আবেদন বাতিল হয়। মূলত এ কারণেই তিনি কানাডায় ফিরে সেখানে আশ্রয় চান। সেখানে মেয়ের সঙ্গে থাকতে চান তিনি।
বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবরে এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে আর ফেরেননি সে সময়ের প্রধান বিচারপতি। নভেম্বরে তিনি সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
পদত্যাগের পর সিনহা চলে যান কানাডায় মেয়ের কাছে। সেখান থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রে। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম দ্য স্টার জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় ফিরে সেখানেই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন সিনহা।
স্টারকে সিনহা বলেন, ‘আমি বিচারপতি থাকাকালে টার্গেটে পরিণত হয়েছিলাম। আমার রায়ের পর আমলাতন্ত্র, সরকারি প্রশাসন, রাজনীতিক এমনকি সন্ত্রাসীরাও আমার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে।
‘যেন আমি হয়ে গিয়েছিলাম জাতীয় শত্রু। আমি যেন অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছিলাম।’
তবে সিনহার তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান স্টারকে বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য বক্তব্য দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশে ফিরতে তার কোনো হুমকি নেই। তিনি শরণার্থী মর্যাদা অর্জনের জন্য এসব বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
কানাডানিয়ান কুরিয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ জুলাই এসকে সিনহা ও তার স্ত্রী সুশমা সিনহা কানাডার ফোর্ট ইরি বন্দরে পৌঁছান। সেখানে তারা রাজনৈতিক শরণার্থী ফরমে আবেদন করেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরের পূর্বে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা করেননি। বই প্রকাশের পরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে তার বাড়ির ছবি প্রকাশ হয়। তারপর থেকে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
এস কে সিনহা জানান, প্রথমে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় তার মেয়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। অস্ট্রেলিয়ার ম্যানিটোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মেয়ে পড়াশোনা করছে। কিন্তু সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর তিনি বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনের কাছে পদত্যাগপত্র দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সময় এস কে সিনহা বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি হিসাবে এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়াটা আমাদের দেশে, সরকার এবং মূল্যবোধের জন্য একটা প্রশ্ন.. কিন্তু আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে?’
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সময় তিনি ‘ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক একটি বই লিখেন। তার বইয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম হয়েছিল।
সংবিধানের ষোড়শ সংধোশনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে শাসন ব্যবস্থা বিরূপ মন্তব্য এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগ ছিল সিনহার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, অবৈধ আয় এবং অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠে। তদন্তেও নামে দুদক।
গত ১১ জুলাই সিনহা ও সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে চার কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এসকে সিনহার ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয় এতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।