জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীতে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা এবং যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার। বিভিন্ন সময় এই পরিস্থিতি উত্তরণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। এমন প্রেক্ষাপটে গত বছরেই ঢাকা নগর পরিবহনের বহরে ১০০টি ইলেকট্রিক (বৈদ্যুতিক) বাস যুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু চলতি বছরের ৯ মাস চলে গেলেও সেই বাস রাস্তায় নামেনি উল্লেখ করে প্রতিবেদন করেছে বাংলা ট্রিবিউন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলেকট্রিক বাস চালানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে আরও অনেক সময় লাগবে।
২০২৩ সালের ৯ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৭তম সভা হয়। কমিটির সভাপতি ছিলেন ডিএসসিসির সদ্য বরখাস্ত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সভা শেষে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, যাত্রীদের সুবিধার জন্য চলতি বছরেই (২০২৩) ঢাকা নগর পরিবহনের বহরে ১০০টি ইলেকট্রিক বাস সংযোজন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরেই ১০০টি ইলেকট্রিক বাস সংযোজনের ঘোষণাটি অবকাঠামো ও কারিগরি উন্নয়ন এবং যাবতীয় প্রস্তুতি না নিয়েই দেওয়া হয়েছিল। ফলে কার্যত এই উদ্যোগে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া ঢাকা নগর পরিবহনের বহরে এই বাস সংযোজনের ঘোষণা আসার পর থেকেই বাস মালিকরা এর জোর বিরোধিতা করে আসছেন।
তাছাড়া এ ঘোষণা দেওয়া ফজলে নূর তাপস সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই বিদেশ চলে যান। পরে তাকে বরখাস্ত করে ডিএসসিসিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে এই উদ্যোগের ভবিষ্যতই অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এ অবস্থায় বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা নগর পরিবহনে ইলেকট্রিক বাস সংযোজনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে তাকে মোবাইলে কল করা হলেও কিছু জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) একজন অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমার জানা মতে, ইলেকট্রিক বাস চালুর ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি। কয়েকটি টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস মালিকরা চাচ্ছে না, তারা এটি ভালোভাবে নেয়নি। সেজন্য কোম্পানিগুলোও আগ্রহী না।’
ডিটিসিএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, ইলেকট্রিক বাস চালু করতে হলে তো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও কারিগরি উন্নয়ন এবং যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। কোত্থেকে বাসগুলো আনা হবে, কোথায় বাসগুলো চার্জ হবে, ডিপো কোথায় থাকবে, ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে— এমন অনেক বিষয় আছে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে ঘোষণা দিলেই তো আর ইলেকট্রিক বাস চালু হয়ে যাবে না, সেজন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, ইলেকট্রিক বাস চালু করতে আরও সময় লাগবে। আমাদের আরও প্রস্তুতি নিতে হবে। কালকের (বৃহস্পতিবার) সভায় আমরা অগ্রগতির বিষয়ে জানতে পারবো।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভা বৃহস্পতিবার
ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন এবং কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তন এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয় কমিটির ২৮তম সভা হবে বৃহস্পতিবার। এদিন সকাল ১১টায় ঢাকা দক্ষিণ নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে ডিএসসিসির প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে।
এ তথ্য জানিয়ে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব নীলিমা আর্থতারের সই করা এক নোটিশে বলা হয়, সভায় ২৭তম সভার সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা; বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি; গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নে করণীয় বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হবে।
এরআগে, ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৬তম সভায় ঢাকা নগর পরিবহনের নতুন ২৪ ও ২৫ নম্বর রুটে ৫০টি বাস চলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০১৫ সালে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।
২০১৭ সালে তিনি মারা গেলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পান ঢাকা দক্ষিণ সিটির তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি কমিটির ১১টি সভা করেছেন। পর শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হলে কমিটির দায়িত্ব পেয়ে কমিটির সভা অব্যাহত রাখেন। তিনি ২৭তম সভা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।