লাদাখে গালোয়ান উপত্যকায় ভারতের অংশে ঘাঁটি গেড়েছে চীনা বাহিনী। বেইজিংয়ের তরফ থেকে বিষয়টি বার বার অস্বীকার করা সত্ত্বেও শেষমেশ হাতেনাতে মিলল প্রমাণ। উপগ্রহ চিত্রে গালোয়ান উপত্যকায় চীনা বাহিনীর উপস্থিতি স্পষ্ট দেখা গেছে।
লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়া ভারতের এলাকায় কার্যত দখলদারির চেষ্টা চালাচ্ছে চীন এমনটাই দাবি ভারতের। গালোয়ান নদী বরাবর চীনা বাহিনীর গাড়ি, তাঁবু ইত্যাদির ছবি ধরা পড়েছে ভারতীয় স্যাটেলাইট চিত্রে। অর্থাৎ দু’পক্ষের সেনার সংঘর্ষের পরের দিন চীনের সেনার অবস্থান ধরা পড়েছে এই ছবিতে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, অস্ত্রসজ্জিত সামরিক যানবাহন এনে গালোয়ান উপত্যকায় ঘাঁটি করারও চেষ্টা করছে চীনা সেনারা। বেইজিং বার বার ভারতের বাহিনীর চীনে প্রবেশের দাবি করলেও বাস্তবে যে উল্টোটাই হয়েছে তা প্রকাশ্যে এলো এ স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে।
গত ১৫ জুন রাতে এ গালওয়ান ভ্যালিতেই দু’পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ভারতের ২৩ জওয়ান নিহত হন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, চীনা সেনাবাহিনীরও অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছে।
চীন দাবি করেছে, ভারতীয় সেনারা প্রথমে এলএসি সীমানা লঙ্ঘন করেছিল। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংঘর্ষ নিয়ে মিথ্যা বলছে বেইজিং। প্রমাণ হিসেবে স্যাটেলাইটের ইমেজকে উপস্থাপন করছেন তারা।
সংঘর্ষের আগে ও পরে পুরো উপত্যকার সব ছবিই প্ল্যানেট ল্যাবের উপগ্রহ চিত্র ধরা পড়েছে। গত ১৬ জুন সংঘর্ষ স্থলের উপগ্রহের ছবি প্রকাশ করা হয়। ধারণ করা ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের গালওয়ান নদী উপত্যকা বরাবর সারি সারি মোতায়েন করা চীনা সেনাবাহিনীর (পিএলএ) বেশ কয়েকটি সামরিক ট্রাক।
গত সপ্তাহেও দুই দেশের সেনা প্রধানরা আলোচনার মাধ্যম শান্তিরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। নিজেদের বাহিনী পিছিয়ে নেয়া হবে বলেও দুই পক্ষ জানায়।
বুধবারের (১৭ জুন) আলোচনায় এখনও পর্যন্ত কোনও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশের ব্রিগেডিয়াররা। আজকে আলোচনার দ্বিতীয় ভাগের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হবে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
গালওয়ান নদী বা গালওয়ান নদী উপত্যকা চীনের সীমানা রেখার পশ্চিমে ও আকসাই চীনের ভারতীয় অংশে অবস্থিত। ১৯৬০ সালে এ উপত্যকার পশ্চিম সীমা শায়ক নদী উপত্যকা সংলগ্ন পার্বত অঞ্চল পর্যন্ত দাবি করেছিল চীন। ফলে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা। এর কয়েকমাস পরেই ভারত ও চীনের যুদ্ধ বেধে যায়।
আকসাই চীন এলাকা থেকে লাদাখ ঘিরে বয়ে চলা প্রাচীন গালওয়ান নদী ভারত ও চীনের চলমান সংঘাতের প্রধান কারণ। বর্তমানে ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে এ উপত্যকাটি দুই দেশের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চীন ও ভারতের মধ্যে চলমান এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে, উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
গেল মঙ্গলবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এ আহ্বান জানান।
অ্যান্তনিও গুতেরেসের পক্ষে তার মুখপাত্র এরিক কানেকো বলেন, ‘আমরা ভারত ও চীনের মাঝামাঝি সীমান্ত লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটা ইতিবাচক যে, উভয় দেশ উত্তেজনা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে।’
এর আগে, ১৯৭৫ সালে ভারত-চীন সীমান্তে শেষবার কোনও সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে বা ইস্টার্ন সেক্টরে অরুণাচলে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি কম হয়নি। কিন্তু এ ধরনের প্রাণঘাতী মারামারি কখনও হয়নি।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, চীন সেনাবাহিনী সীমান্তের যে এলাকায় রয়েছে সেখান থেকে ভারতের অংশে ঢুকতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগবে। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে চীনা বাহিনী।
এদিকে ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পুরোদস্তুর বিমানঘাঁটি গড়ে তুলছে চীন। তাদের ঘাঁটিতে জে-১১ বা জে-১৬ যুদ্ধ বিমানও রয়েছে। গত ২৬ মে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর দেয়।
খবরে বলা হয়, লাদাখে প্যাংগং লেকের ২০০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের ‘গাড়ি কুনসা’য় দশ বছর আগেই একটি বিমানবন্দর বানিয়েছে চীন। বেইজিং তখন জানিয়েছিল, অসামরিক বিমান পরিবহণের জন্যই ওই বিমানবন্দর তৈরি করা হচ্ছে।
কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, গত এক মাসে ওই বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ রাতারাতি বেড়ে গেছে। এবং সেখানে রীতিমতো একটি বিমানঘাঁটি তথা এয়ারবেস বানিয়ে ফেলেছে চীন। উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, সেখানে যুদ্ধবিমানও দাঁড় করিয়ে রেখেছে চীনের বিমানবাহিনী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।